মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর (নীলফামারী): নীলফামারীর সৈয়দপুরে ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনায় দীর্ঘদিনের চিকিৎসার পরও চোখের আলো ফেরেনি চোখে আঘাতপ্রাপ্ত শিশু আজমির সরকারের (৬)। চলন্ত ট্রেনে দুর্বৃত্তদের ছুড়ে মারা পাথরের আঘাতে তার ডান চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সে ওই চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পাবে না বলে জানিয়েছেন দেশ ও দেশের বাইরের কয়েকজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ।
এদিকে বাবা-মা আদরের সন্তানের চোখের আলো ফেরাতে পাঁচ লাখ টাকার বেশি খরচ করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তারপরও আজমিরের নিভে যাওয়া চোখের আলো ফিরিয়ে আনতে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেপালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন তার বাবা-মা।
এ ঘটনায় সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশ তাদের তদন্তে দুর্বৃত্তদের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি। ওই অবস্থাতেই আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।
জানা গেছে, গত বছরের ১৫ আগস্ট নীলফামারীর ডোমার উপজেলার গোমনাতী ইউনিয়নের দক্ষিণ আমবাড়ী গ্রামের হ্যাচারি ব্যবসায়ী মারুফ আলম ছোট ছেলে আজমির সরকারকে নিয়ে আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনযোগে ডোমার থেকে সৈয়দপুরের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। আজমির তার বাবার কোলেই বসেছিল।
ট্রেনটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সৈয়দপুর রেলস্টেশনে প্রবেশের সময় হোম সিগন্যালের কাছে পৌঁছালে ওই ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। তাদের ছোড়া একটি পাথর এসে আঘাত করে ট্রেনের বগির জানালার পাশে বসা শিশু আজমিরের ডান চোখে। এতে মারাত্মক আঘাত পেয়ে তার চোখ ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে।
পরে সৈয়দপুরে নেমে রেলওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় দ্রুত সৈয়দপুর হাসপাতালে নেয়া হয় আজমিরকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকেরা শিশুটির চোখের অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শে পরে আজমিরকে রাজধানীর ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের নিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. কামরুল হাসান সোহেলের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করানো হয়। সেখানে দুই দফায় অস্ত্রোপচার করে আজমিরের চোখের ভেতরে থাকা ট্রেনের বগির জানালার গ্লাসের টুকরো অপসারণ করা হয়। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
আজমিরের বাবা মারুফ আলম জানান, ঢাকায় চিকিৎসার পরও আজমিরের আঘাতপ্রাপ্ত ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি নিভে গেছে। পরে ভারতের কলকাতায় শংকর নেত্রালয়ে তিন দফায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। সর্বশেষ গত ২৩ আগস্ট সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, আর কখনোই আজমির তার চোখের আলো ফিরে পাবে না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা মারুফ আলম জানান, শুরু থেকে সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এরই মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। ওই টাকার জোগান দিতে তিনি কৃষিজমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় সে সময় সৈয়দপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার ময়নুল হোসেন বাদী হয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করলেও ব্যাপারটা ওই পর্যন্তই শেষ।
তিনি বলেন, মামলার পর থানা পুলিশ তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। বাংলাদেশ রেলওয়েরও কেউ খোঁজ নেননি তার সন্তানের।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ওসি (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. শফিউল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এরই মধ্যে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দেয়া হয়েছে। ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা দুর্বৃত্তদের পরিচয় মেলেনি বলে মামলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা বন্ধে রেললাইনের দু’পাশে বসবাসকারীদের ও ট্রেনযাত্রীদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করা হয়।