ট্রেন টিকিট সংগ্রহে নাগরিকদের বিড়ম্বনার খবর পুরোনো। নানা ব্যবস্থা নিয়েও এ ক্ষেত্রে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দূর করা যায়নি। টিকিট সংগ্রহে জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় জনদুর্ভোগ কমবেÑএমনই ধারণা ছিল রেল কর্তৃপক্ষের। এক ধরনের আত্মতৃপ্তিও লক্ষ করা গেছে তৎকালীন মন্ত্রীর। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার টিকিট কালোবাজারি কমায়নি, বরং বাড়িয়েছে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘টিকিট কালোবাজারিতে সহজ ও রেলের কর্মচারীদের চক্র’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল আদতে টিকিট কাটার পুরো প্রক্রিয়া রক্ষণাবেক্ষণে যারা দায়িত্বরত, তারাই কালোবাজারিতে জড়িত। কাউন্টারে থাকা বুকিং কর্মচারী ও তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অনলাইনে টিকিট কেনার জন্য ব্যবহƒত ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের কর্মচারী-কর্মকর্তা ও আইটি বিশেষজ্ঞদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় শুধু দুটি চক্রের কাছে প্রতিদিন চলে যাচ্ছে অন্তত ৫০০ টিকিট। মজার বিষয় হলো, একবার যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করা হয়েছে, পরে ওই পরিচয়পত্র দিয়ে অনেক টিকিট বিক্রি হয়েছে; অথচ আইডি কার্ডধারী আর টিকিট কেনেননি।
দেশব্যাপী ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের ১৪ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেবে এসব তথ্য জেনেছে র্যাব। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব সংবাদ সম্মেলনে কালোবাজির চক্রের কার্যক্রম সম্পর্কে বিবরণ দিয়েছে। যেমনÑট্রেনের কাউন্টারে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ যাত্রী, রেলস্টেশনের কুলি, স্টেশনের আশপাশের এলাকার টোকাই, রিকশাচালক ও দিনমজুরদের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতেন। প্রতি এনআইডির বিপরীতে চারটি টিকিট দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তাদের চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করার বিনিময়ে ১০০ টাকা করে দেয়া হতো। কাউন্টারের অসাধু টিকিট বুকিং কর্মচারীর যোগসাজশে তারা বিভিন্ন সাধারণ যাত্রীর টিকিট কাটার সময় দেয়া এনআইডি সংগ্রহ করে রাখতেন। পরে সেগুলো ব্যবহার করে সংরক্ষণকৃত প্রতিটি এনআইডি দিয়ে চারটি করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতেন।
অনেক ক্ষেত্রে টিকিট কাউন্টারে নিজেরা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতেন চক্রের সদস্যরা। আবার অনেক সময় কৌশলে লাইনে অপেক্ষমাণ টিকিটপ্রত্যাশী সাধারণ যাত্রীদের এনআইডি ব্যবহার করে চারটি টিকিট ক্রয় করিয়ে তিনটি টিকিট নিজেরা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে কিনে নিতেন। শুধু তা-ই নয়, সহজ ডটকমের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সার্ভার রুম বা আইটির সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কাছে সংরক্ষিত জনসাধারণের এনআইডির তথ্য ব্যবহার করে এমনকি সার্ভার ডাউন করে তারা অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করতেন। চক্রটি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দিয়ে অনলাইনে টিকিট কেটে সেগুলো তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করত। এভাবে টিকিট কালোবাজারির অবৈধভাবে বিভিন্ন পন্থায় বিপুলসংখ্যক ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতেন। এর ফলে যাত্রীদের পাশাপাশি রেলওয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেহেতু চক্রটির টিকিট সংগ্রহ বিক্রি পদ্ধতি সর্বসাধারণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে; তাই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা রেল কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব। পাশাপাশি জড়িত কর্মী এবং সহজের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে।