শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: রুনি রানী রায় (৪১) একজন সম্ভাবনাময় সফল ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা। পৌর শহরের গোবিন্দনগর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। স্বামী, ২ ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। ৬ বছর আগে রুনিদের কিছুই ছিল না। তাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। নিজেদের কোনো উৎপাদনশীল সম্পদ ছিল না। স্বামীর একার আয় দিয়ে সংসার চলত তাদের। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ এবং চিকিৎসার খরচ যোগান দেয়া তো দূরের কথা, দিনে দু বেলা খাবার জোগান দিতে, ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণ খরচ মেটাতে প্রচুর হিমশিম খেতে হতো।
সে অবস্থা থেকে উত্তরণে সুযোগ অনুসন্ধান করতে থাকেন রুনি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ’ এর ঠাকুরগাঁও এরিয়া প্রোগ্রামের স্পন্সরশিপ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হন। সেখান থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ ও ওরিয়েন্টেশনে অংশগ্রহণ করেন এবং জ্ঞান অর্জন করেন। ২০১৮ সালে রুনি আল্ট্রাপোর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামে অন্তর্র্ভুক্ত হন। এর আওতায় তাকে দুই দিনব্যাপী ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ শেষে ১৮ হাজার ৫০০ টাকার ব্যবসা উপকরণ বিনামূল্যে দেয়া হয়। এ থেকে প্রশিক্ষণের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন রুনি। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
রুনি রানী রায় বলেন, এক সময় আমার ও আমার পরিবারের অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। পরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের সহযোগিতায় আমার ও পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমি প্রশিক্ষণের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। পাশাপাশি আমি ১টি গরু ও ২টি ছাগল পালন শুরু করি। পরে সেগুলো বাচ্চা দিলে গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। ব্যবসা থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে দিনপ্রতি ৫০০ টাকা আয় হয়। আমার মোট উৎপাদনশীল সম্পদের মধ্যে গরু ৩টি বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা এবং ছাগল ৫টির মূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকা। গবাদি পশু থেকে দুধ বিক্রি করেও প্রায় ১৮ হাজার টাকার মতো আয় হয়।
রুনি জানান, পরিবারে পুষ্টির চাহিদা পূরণে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহযোগিতায় বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে সবজির বীজও প্রদান করা হয় তাকে। বর্তমানে তারা মৌসুম অনুযায়ী সবজি আবাদ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে তা বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। পরিবারের আয় থেকে টাকা সঞ্চয় করে ও সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তারা ২০২০ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ৩ শতাংশ জমি কিনেছেন। বাড়ির পাশের জমিতেই সবজি চাষাবাদ করে তা সারা বছর বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রুনি রানী রায়ের মতো ৪০টি হতদরিদ্র পরিবারের পাশে থেকে সহায়তার মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।