Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:13 pm

ঠাকুরগাঁওয়ে আমনে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও দেশের উত্তরের কৃষিনির্ভর একটি জেলা। আমন নিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকেরা। চারদিকে সবুজ-সোনালি ফসলের মাঠ। আর কিছুদিনের মধ্যেই আমন ঘরে উঠবে কৃষকের। এরই মধ্যে অনেক স্থানে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু করছেন কৃষক। অনুকূল আবহাওয়া, সময়োপযোগী বৃষ্টি, জলাবদ্ধতার অবসান এবং কৃষি অফিসের নিয়মিত পরামর্শ ও তদারকির কারণে এ বছর এ জেলার কৃষকেরা আমনের ভালো ফলনে আশা করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর আমনের বাম্পার ফলন হবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ। তাই জেলার কৃষকেরা আমনে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন।

সরেজমিনে সদর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কিছু স্থানে আগাম জাতের ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকেরা।

সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, এবার পাঁচ একর জমিতে আমন সুমন স্বর্ণ ধান রোপণ করছি। শেষ সময়ে ভালো বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছি এবং ভালো দাম পেলে ধান বিক্রি করে ধান লাভবান হব। আবার কিছু কিছু জায়গায় ধানগাছ সোনালি আকার ধারণ করেছে, যা আর কয়েক দিনের মধ্যেই কেটে ঘরে তুলতে পারব।

তিনি জানান, ধানের চারা রোপণের পরপর বৃষ্টির পানির অভাবে কৃষকেরা চারা রোপণ করতে পারছিলেন না। ফলে বেশ কিছু কৃষককে শ্যালোমেশিন ও বরেন্দ্র গভীর নলকূপের সাহায্যে পানি দিতে হয়েছে। কিছু এলাকায় বৃষ্টির জন্য দোয়া, ব্যাঙের বিয়েসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও দেখা যায়। পরে বৃষ্টির পর্যাপ্ত পানি পাওয়ায় কৃষকেরা স্বস্তির ঢেঁকুর ফেলেন। তাই নতুন ধান ঘরে তোলার মাধ্যমে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন জেলার কৃষকেরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট, বরুনাগাঁও, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ী, খোঁচাবাড়ী এবং জেলার পীরগঞ্জ, হরিপুর, রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমনের ধান কাটার দৃশ্য। দলবেঁধে শ্রমিকেরা আমন ধান কাটছেন। তাদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের আমনের ক্ষেতে কাজ করার দৃশ্য চোখে পড়ে বেশ কয়েক জায়গায়। জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে জেলায়। তবে আমনে ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকেরা নতুন সমস্যায় পড়েছিলেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চার লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন, যা গত বছরে চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের মতো ধানের জন্যও বিখ্যাত এ জেলা। প্রচুর ধান এ জেলায় উৎপাদিত হয়। প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও কৃষকদের যাবতীয় কৃষিসেবা প্রদান করা হয়। বৃষ্টি, সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা চালু ও সেচ পাম্পগুলোও সচলের মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণ হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু স্থানের ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকেরা। বাকিগুলোও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদিত হবে এবং কৃষকেরা এ বছরও ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।