Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:26 pm

ঠাকুরগাঁওয়ে আমন ধানক্ষেত ফেটে চৌচির

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও দেশের উত্তরের কৃষিনির্ভর ও খরাপ্রবণ একটি জেলা। তেমন কোনো ভারী শিল্পকারকারখানা এখনও স্থাপিত না হওয়ায় কৃষিকাজই এ জেলার মানুষের একমাত্র আশা-ভরসা। কিন্তু কৃষিকাজে বিভিন্ন দুর্যোগ লেগেই আছে। চলতি মৌসুমে খরা ও পোকার আক্রমণে আমন ক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। সদর উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, এখন আমনের চারা রোপণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু পানির অভাবে আমনক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এতে করে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছু অঞ্চলে কৃষকরা বিএমডির গভীর নলকূপ ও শ্যালো মেশিনের সাহায্যে ক্ষেতে সেচ দিচ্ছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান, আখানগর, ভেলারহাট, দানারহাট, বরুনাগাঁও, শীবগঞ্জ, নারগুন, বেগুনবাড়ি, খোঁচাবাড়ী এবং জেলার পীরগঞ্জ, হরিপুর, রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আমনক্ষেত শুকিয়ে ফেটে চৌচির। আমনক্ষেত বাঁচাতে অনেক কৃষককে বিএমডির গভীর নলকূপের সাহায্যে সম্পূরক সেচ দিতে দেখা যায়। তবে বৃষ্টির পানির অভাবে উঁচু জমিতে লাগানো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে গেছে। এ অবস্থায় বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় রয়েছেন এ জেলার কৃষকরা।

অন্যদিকে ডিজেলসহ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা পড়েছেন নতুন সমস্যায়। আমনের ক্ষেতে পানি নিতে শ্যালো মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু কিছু স্থানে বিদ্যুৎচালিত পাম্প ব্যবহার করে সেচ কাজ করার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ না থাকায় তা ব্যাহত হচ্ছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপগুলোও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে ঠিকমতো চলতে পারছে না। ফলে নানামুখী সমস্যায় পড়েছেন কৃষকরা। 

সদর উপজেলার ভেলজান গ্রামের কৃষক আবুল রশিদ জানান জানান, তিনি এ বছর আট একর জমিতে আমন ধান লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড রোদ আর বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। বিএমডির গভীর নলকূপের সাহায্যে সম্পূরক সেচ দিয়ে তিনি আগাছা পরিষ্কাররে কথা জানান। 

সদর উপজেলার ভেলারহাট গ্রামের কৃষক আহম্মদ আলী জানান, তিনি এ বছর তিন একর  জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড রোদ আর বৃষ্টি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। সদর উপজেলার নদীপাড়া এলাকার কৃষক রমজান আলী জানান, প্রত্যেক বছরের মতো এ বছর তিনি তিন একর জমিতে আমন লাগান। কিন্তু বৃষ্টির পানির অভাবে ধান লাগিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। তিনি জানান, আমন ও বোরো মৌসুমে খরা প্রতিরোধ ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এবং দেশের অর্থনীতি ও দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বরেন্দ্র অঞ্চলে অধিক পরিমাণে নতুন নতুন বিএমডির গভীর নলকূপ স্থাপন ও পাইপলাইনের বরাদ্দ দেয়া দরকার। তাহলে বহুগুণে ফসল উৎপাদন বেড়ে যাবে এবং কৃষকের খরচ কমবে। দেশ লাভবান হবে।

ঠাকুরগাঁও বিএমডির প্রকল্প পরিচালক রেজা মুহাম্মদ নুরে আলম জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বিদ্যুৎ, তেলসাশ্রয়ী কিছু পাঁচ কোয়া সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু সোলার পাম্পের কাজ চলমান রয়েছে, যা দিয়ে অল্প খরচে কৃষক ধান, সবজি ও বিভিন্ন ক্ষেতে পানি দিতে পারছে।

বিএমডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলায় মোট এক হাজার ৪৮৮টি গভীর নলকূপ ও এলএলপি পাম্প চালু রয়েছে। কৃষকরা আমন ও বোরো মৌসুমে ধান, গম, ভুট্টা, মরিচসহ বিভিন্ন ক্ষেতে স্বল্প খরচে সেচ দিতে পারছেন। যে এলাকায় পাইপলাইনের স্বল্পতা রয়েছে, সেখানে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা যায়, এ বছর জেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর, যাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চার লাখ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। গত বছর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানান, অন্যান্য ফসলের মতো ধানের জন্যও বিখ্যাত এ জেলা। প্রচুর পরিমাণে ধান এ জেলায় উৎপাদিত হয়। প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও কৃষকদের যাবতীয় কৃষি সেবা প্রদান করা হয়। বৃষ্টির পানির অভাবে একটু সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে উঁচু জমিগুলোয় পানি থাকছে না। তবে বৃষ্টির পানি না হওয়া পর্যন্ত সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা চালু রাখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেচ পাম্পগুলিও সচল রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হবে এবং কৃষকরা এ বছরও ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।