শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে এবারও হলো না মিলনমেলা। জেলার হরিপুর উপজেলায় কুলিক নদীর পারে ঐতিহ্যবাহী পাথরকালি মেলা উপলক্ষে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যুগ যুগ ধরে দুই বাংলার হাজারো মানুষ তাদের স্বজনদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে আসেন এ মেলায়। কিন্তু মেলা না হওয়ায় নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় দু’দেশের স্বজনদের।
গত শুক্রবার নিয়ম অনুযায়ী হরিপুরের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬নং ভাতুড়িয়া ইউনিয়নের মাকড়হাট ক্যাম্পের ৩৪৬
পিলার-সংলগ্ন টেংরিয়া গোবিন্দপুর গ্রামে হওয়ার কথা ছিল এ মিলনমেলা। সে মোতাবেক বাঙালি আত্মীয় স্বজনরা প্রিয় স্বজনদের জন্য জিনিসপত্র নিয়ে কাঁটাতারের পাশে অবস্থান করলেও ভিড়তে পারেননি কাঁটাতারের পাশে।
জানা যায়, ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবার লাখো মানুষের সমাগমে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা হয়ে থাকে। গত বছর কভিড সংক্রমণের কারণে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়নি। এবারও একই কারণে মেলা আয়োজন করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে কাঁটাতারের এপারে ও ওপারে থাকা আত্মীয়স্বজনরা একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হতে পারনেনি।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (বিশেষত ওমিক্রন) কারণে এবার সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে কোনো মানুষকে ভিড় জমাতে দেয়নি ভারতীয় ও বাংলাদেশি সীমান্ত বাহিনী।
কয়েক যুগ ধরে এখানে পাথরকালি মেলার আয়োজন করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। কালীপূজার পর ওই এলাকায় বসে এ পাথরকালি মেলা। মেলা ঘিরে একদিনের জন্য সীমান্ত উš§ুক্ত করে দেয়া হয়। দুই বাংলার অনেক মানুষ আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। সঙ্গে আনা জিনিসপত্র কাঁটাতারের ওপর দিয়ে ছুড়ে দেন স্বজনদের উদ্দেশ্যে।
স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে আশা জব্বার জানান, বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বসবাস করছেন নিজস্ব আত্মীয়রা। দেখা করা, গল্প করা ও একজন আরেকজনের বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে হলেও কোনো উপায় নেই। কারণ মাঝখানে আছে কাঁটাতারের বেড়া। প্রতি বছর একটি পূজা কেন্দ্র করে কাঁটাতার ধরে দু’দেশের স্বজনদের দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু এবার সেটাও হলো না।
নিজের ভাইকে দেখতে আসা আলী আকবর বলেন, আপনজনদের দেখার জন্য এক বছর অপেক্ষা করে থাকি। নিজের ভাই থাকে পরিবারসহ ওপারে। গতবছরও দেখা করতে পারিনি। এবারে আশা ছিল ভাইয়ের মুখ দেখতে পারব কিন্তু ভারতের প্রশাসন তা হতে দিল না।
মেয়ের জন্য পিঠা নিয়ে আসা বৃদ্ধা সালেহা বেগম বলেন, এখন এই পিঠা কে খাবে? মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনির জন্য নিজের হাতে পিঠা বানিয়ে নিয়ে আসছি। কিন্তু পিঠা দেয়া দূরের কথা, এক পলক দেখা করতেও পারলাম না।
মেয়ে ও নাতনির জন্য নিজ হাতে বানানো পিঠা নিয়ে আসা আমেনা বেগম বলেন, নাতনির বয়স তিন বছর। গত বছরও দেখিনি এবারো দেখা হলো না।
পূজা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নগেন কুমার পাল বলেন, কভিডের কারণে মিলনমেলা করা সম্ভব হয়নি। শুধু পূজা পালন করা হয়েছে।
হরিপুরের গোবিন্দপুর ও চাপাসার ক্যাম্পে কর্মরত সীমান্ত বাহিনীর সদস্যরা জানান, কভিডের কারণে এবার মিলনমেলা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। কাঁটাতারের কাছে কোনো বাংলাদেশি যেন না যায় সে বিষয়ে আমাদের অনুরোধ করেছে।