ঠাকুরগাঁওয়ে কমছে গমের আবাদ

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: উত্তরের অতি শীতপ্রবণ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের জমি বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। তেমন বিকল্প না থাকায় কৃষিকাজই এ জেলার মানুষের একমাত্র ভরসার স্থল। সে কৃষিকাজে দীর্ঘদিনেও বদলাচ্ছে না তাদের ভাগ্য। তবে এবার ধান ভালো উৎপাদন হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন তারা। কিন্তু বাজারে মৌসুমের শুরুতে ধান ও গমের দাম কমে যাওয়া তাদের সে হাসি মিলিয়ে গেছে। কৃষকের গোলা থেকে ধান ফুরাতেই বেড়েছে দাম। একই অবস্থা গমের ক্ষেত্রেই। এভাবে বাজার ওঠানামায় এবার কৃষকরা কম জমিতে গমের আবাদ করছেন বলে জানা গেছে।

কৃষকরা বলছেন, সঠিক সময়ে ভালো দাম না পাওয়ায় কৃষকরা কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা জানান, ঠাকুরগাঁও অতি শীতপ্রবণ এলাকা, গরমের সময় অত্যধিক গরম পড়ে এবং শীতকালে অত্যধিক ঠাণ্ডা থাকে। আর বেশি শীত থাকায় এ জেলায় গমের আবাদও ভালো হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে জেলায় এবার গমের ভালো ফলনের আশা করছেন তারা।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় এবার মোট গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হয়েছে ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে, এ পর্যন্ত গম আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার হেক্টর কম জমিতে গম আবাদ হয়েছে। এবার জেলার সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর, বালিয়াডাঙ্গীতে ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর, রানীসংকৈলে ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, পীরগঞ্জে ১০ হাজার ৯০০ হেক্টর এবং হরিপুর উপজেলায় গম আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন জাতের গম বিশেষ করে বারি গম-২৫, ২৮, ৩০ ও ৩৩ জাতের গম আবাদ করেছেন কৃষকরা। তাছাড়া গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনেক জমিতে গম আবাদ হয়েছে। শেষ পর্যায়ে ধানের দাম ভালো হওয়ায় গমের দামও এবার বাড়তি থাকবে বলে আশা কৃষকদের।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. আমিরুল ইসলাম আলি বলেন, ‘দ–ই একর জমিতে গম আবাদ করেছি। এবার ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছি। গম আবাদে খরচ অনেক। আশা করি, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে ও গমের দাম ভালো থাকলে লাভবান হবো।’

একই গ্রামের মো. সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার পাঁচ একর জমিতে গম আবাদ করেছি। বড় আশা নিয়ে গম আবাদ করেছি, দাম কেমন হবে জানি না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো লেগেই আছে। আমাদের কৃষকদের দিকে কেউ তাকায় না, বেতন বাড়ে শুধু সরকারি চাকরিজীবীদের। আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপন্ন করি, সেই কৃষি পণ্যেরও ন্যায্য দাম পাই না। সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছি না।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া গম চাষের অনুকূল হলেও দামের ওঠানামা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এ ফসলের আবাদ বাড়ছে না। বিপরীতে বাড়ছে ভুট্টা ও মরিচ চাষ। গমের তুলনায় এসব ফসলের ফলন বেশি হওয়ায় কৃষকের আগ্রহও বাড়ছে। চলতি বছর জেলায় মোট ভুট্টা আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৯৬৫ হেক্টর। আর মরিচ আবাদ হয়েছে এক হাজার ২৯৬ হেক্টর জমিতে।

জানা গেছে, গম ও ভুট্টা দিয়ে আটা, ময়দা, বিস্কুট, পাউরুটি এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির বিভিন্ন খাবার তৈরি হচ্ছে। তবে বিদেশ থেকে গম আমদানি করার ফলে দেশীয় বাজারে গমের দাম কমে যাচ্ছে। এতে কৃষকরা ফসলটি চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া হেক্টরপ্রতি গম উৎপন্ন হয় ৮৫-১০০ মণ। অথচ ভুট্টা উৎপন্ন  হয় ৩০০-৩৫০ মণ। অন্যদিকে বিঘাপ্রতি মরিচ চাষে খরচ হয় ১৫-২০ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে বিক্রি করা যায় ৭০-৮০ হাজার টাকার। ফলে এ দুই ফসলে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, ‘এ জেলায় বেশি পরিমাণ জমিতে কৃষক গম আবাদ করে। বীজ বপন, সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, সেচ প্রদান পদ্ধতি সম্পর্কে

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করি, এবার ধানের মতো গম চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০