শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: উত্তরের খরাপ্রবণ জেলাগুলোর একটি ঠাকুরগাঁও। ঠাকুরগাঁওসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় টানা ১৪ দিন ধরে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। নীল আকাশে উড়ছে সাদা মেঘ, নেই বৃষ্টিপাত। দাবদাহ আর সূর্যের প্রখর রোদে তপ্ত মাঠঘাট। আষাঢ়ের শেষে শ্রাবণের শুরু হলেও দেখা নেই কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাতের। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না গরমের কারণে। দাবদাহের ফলে অস্থির হয়ে উঠছে মানুষ। তীব্র রোদের কারণে রাস্তায় বের হলে গায়ে যেন লাগছে আগুনের হলকা। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে রোদে পুড়ে বাইরে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্ষেতখামারে কৃষিশ্রমিক ও নির্মাণ শ্রমিকরা।
এদিকে কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে আমন আবাদ। প্রচণ্ড দাবদাহে পুড়ছে ক্ষেতের ফসল, যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। কেউ কেই বিএমডিএ’র গভীর নলকূপ বা শ্যালো মেশিনের সাহায্যে আমন রোপণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। অনেকেই আবার ফসল বাঁচাতে জমিতে অতিরিক্ত সেচ দিচ্ছেন। ফলে স্বল্প আয়ের কৃষকদের আমন আবাদে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলায় ১৪৮৮টি গভীর নলকূপ ও এলএলপি পাম্প রয়েছে, যার মাধ্যমে কৃষকরা স্বল্প খরচে বোরো ও আমন মৌসুমে বিভিন্ন ক্ষেতে সেচ দিতে পারেন। তিনি বলেন, আমন আবাদের লক্ষ্যে যেসব এলাকায় পাইপ লাইনের সমস্যা, সেখানে পাইপ লাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শ্যালো মেশিনের তুলনায় আমাদের খরচ অনেক কম।
ঠাকুরগাঁও সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আগের দিন যা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ হয় ৬১ শতাংশ। এ অবস্থা আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, ‘সূর্যের তীব্রতা এতই বেশি যে, বেশিক্ষণ ক্ষেতে কাজ করা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে শরীরের চামড়া ঝলসে যাচ্ছে।’
একই গ্রামের কৃষক দবাইল বলেন, শ্রাবণ মাস পড়ে গেছে, এখনও কাক্সিক্ষত বৃষ্টি নেই। তাই বিএমডিএ’র গভীর নলকূপের সাহায্যে সেচ দিয়েও আমন আবাদ শুরু করছি।
ভুক্তভোগী আরেক কৃষক আখানগর গ্রামের আহম্মদ আলী বলেন, ‘গত ২০ বছরেও এমন গরম দেখা মেলেনি। শ্যালো মেশিনের পানি কম উঠছে, এতে সেচে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। এরপরও ফসল ঘরে ওঠাতে পারব কি না জানি না। ’
টানা দাবদাহ চলায় আমন ও সবজি ক্ষেতে সম্পূরক সেচ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলেই কেটে যাবে এ দুর্ভোগ। ’
শুধু কৃষকরাই নয়, তীব্র গরমে কঠিন সময় পার করছে উপজেলার মানুষরা। ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু, বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিনে গরমের কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. মো. ফিরোজ জামান জুয়েল বলেন, এ সময়ে শিশুসহ বয়োবৃদ্ধদের প্রয়োজন বাড়তি সচেতনতা। সিজনাল ফলমূল, ডাবের পানি ও স্যালাইন খেতে হবে। অতিরিক্ত জ্বর বা রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে বা নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। ’