Print Date & Time : 16 June 2025 Monday 8:28 pm

ঠাকুরগাঁওয়ে দিন দিন কমেছে গমের আবাদ

 

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: উৎপাদনের দিক দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ গম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত  ঠাকুরগাঁও। সরকারও এ জেলা থেকে গম কেনে সর্বাধিক। উত্তরের এই জেলার মাটি এবং আবহাওয়া গম চাষের উপযোগী। তাই এ জেলায় গমের আবাদ বরাবরই ভালো হয়। তবে গম চাষ লাভজনক না হওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষকরা। ঝুঁকছেন ভুট্টা চাষে। গমের থেকে ভুট্টার দাম বেশি পাওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ে গত পাঁচ বছরে ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে কমেছে গমের আবাদ।

কৃষকদের অভিযোগ ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে গম রোপণ, সার,  কীটনাশক, সেচ এবং গম কাটা-মাড়ার খরচ বেড়েছে। বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়াও দুষ্কর  হয়ে পড়েছে। এদিকে কম খরচে উৎপাদন বেশি হওয়ায় গমের পরিবর্তে দিন দিন আবাদ বেড়েছে ভুট্টার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলা কার্যালয়ের পরিসংখ্যান মতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ৫০ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন।

২০২০-২১ অর্থবছরে জেলায় ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন গম। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭২১ মেট্রিক টন গম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় ৩৬ হাজার ৬৫৭ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৭৯ মেট্রিক টন এবং চলতি মৌসুমে তথা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ৩১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৬ মেট্রিক টন। যাতে দেখা যায় ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ কমেছে ৮৪ হাজার ১৯ মেট্রিক টন।

সদর উপজেলার কৃষক আনছারুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগে গম চাষ করতাম। গমে লাভ কম হওয়ায় এখন ভুট্টা আবাদ করি। একইভাবে ওই এলাকার কৃষক ওসমান আলী, আলম, সহদেব কুমাররাও গম ছেড়ে ঝুঁকেছেন ভুট্টা চাষে।

সদর উপজেলার চিলারং গ্রামের কৃষক মুনছুর আলী বলেন, গমের চেয়ে ভুট্টা ও আলুর উৎপাদন বেশি হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়। এক বিঘা অর্থাৎ ৩৩ শতাংশ জমিতে গম আবাদ করতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর উৎপাদিত গম বিক্রি করে সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। অন্যদিকে এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করে পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। যেটি অনেক লাভজনক।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া এলাকার কৃষক মেহেদী হক জানান, গমের আবাদ করি ফলনও ভালো হয় কিন্তু দাম পাই না। সরকার যদি ন্যায্য দাম দেয় তাহলে অনেক কৃষকই আবারও গম চাষে আগ্রহী হবে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আলমগীর কবির বলেন, রবি মৌসুমে অন্যান্য ফসল বিশেষ করে ভুট্টা, শাকসবজি ও ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাওয়া এবং এগুলোর দাম ভালো পাওয়ার কারণে কৃষকরা এসব ফসলের দিকে ঝুঁকছে। এর ফলে দিন দিন ঠাকুরগাঁও জেলায় গমের আবাদ কমে আসছে।

তারপরও ঠাকুরগাঁও জেলায় যে গমের আবাদ হয়েছে তা সারা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। আমরা কৃষি বিভাগ গমচাষিদের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত উচ্চ ফলনশীল গমের জাত এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছি। এই ক্ষেত্রে গমের আবাদ বৃদ্ধির জন্য যুগোপযোগী হাইব্রিড জাত এবং মূল্য ভালো পেলে আশা করা হচ্ছে গমের আবাদ আবারও বৃদ্ধি পাবে।