ঠাকুরগাঁওয়ে পাটের দামে খুশি কৃষক

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: উত্তরের সীমান্ত কোলঘেঁষা অবহেলিত জেলাগুলোর মধ্যে একটি ঠাকুরগাঁও। জেলাটিতে বিগত বেশ কয়েক বছর পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া ও বৃষ্টি না হওয়ায় খরার কারণে এ সোনালি আঁশ কৃষকদের গলার ‘ফাঁস’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাজারে পাটের দরপতন হওয়ার ফলে চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল চাষিরা। তবে বর্তমানে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে সরকারি উদ্যোগ নেয়ার ফলে আবারও সুদিন ফিরেছে কৃষকদের ঘরে। কৃষি বিভাগের তদারকিতে জেলায় চলতি বছর পাট চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলন বাম্পার হয়েছে। কৃষকরা এবার ভালো দাম পেলে আগামীতে পাটের আবাদ আরও বাড়বে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় সাত হাজার ৭৫৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে আবাদ হয়েছে ছয় হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে। গত বছর আবাদ হয়েছিল সাত হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছর থেকে এক হাজার ৭৩০ হেক্টর কম।
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকার বাজারগুলোয় পাট কেনা-বেচায় পাটের বাজারগুলো জমে উঠেছে। সদর উপজেলার পাট চাষি দবিরুল জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আট থেকে ১২ মণ পাটের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গত শনিবার আলাদি বাজারে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার থেকে ৮০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছর পাট ওঠার শুরুর দিকে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি করে কৃষক তেমন লাভ করতে পারেনি। এবার একটু হলেও বেশি। এতে কৃষকের মনে আশার অলো দেখা যাচ্ছে।

চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে জাগ দেয়া পাটের ছাল ছাড়াচ্ছিলেন আব্দুল হাকিম। তিনি জানান, পাট চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। এমন কথা শুনে এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। পাট কেটে আঁশ ছাড়াতে শুরু করছি। বর্তমানে বাজারে পাটের দাম গতবারের থেকে ভালো। আশা করি এতে কিছু হলেও লাভ হতে পারে।

একই গ্রামের দুলাল, সামসুদ্দিন, আলমসহ কয়েকজন চাষি জানান, তারা বাপ-দাদার আমল থেকে কয়েক যুগ ধরেই পাট চাষ করছেন। এই এলাকায় একটি জুট মিল (করিম জুট মিল) স্থাপিত হয়েছিল। কয়েক বছর ধরে পাটের নায্যমূল্য থেকে তারা বঞ্চিত। সুপ্রিয় জুট মিল নামে আরও একটি বড় জুট মিল স্থাপিত হয়েছে। তাই এখানে পাটের বাজারে সুদিন ফিরে আসবে, এমনই প্রত্যাশা। তাই আবারও পাট চাষ করছেন তারা। তাদের দাবি মৌসুমের শুরু থেকেই যেন তারা পাটের ভালো দাম পান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিগত বছরগুলোয় পাটের দাম পাওয়ায় এ বছরও পাট চাষে ঝুঁকেছেন জেলার চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এই অঞ্চলে পাটের ফলন ভালো। আমরা পাটের চাষাবাদ বাড়াতে এবং ভালো ফলনে প্রতিনিয়ত পাটচাষিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাট চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ থেকে সবরকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে বাজারে পাটের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন চাষিরা। আমরা পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০