Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:46 am

ঠাকুরগাঁওয়ে পাটের ভালো ফলনে খুশি কৃষক

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: কৃষি কাজের জন্য পরিচিত জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে এবার পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া দাম ভালো পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। জেলায় ধান ও গমের পাশাপাশি চাষ হয়ে থাকে পাটেরও। এ বছর সোনালি আঁশ পাটের চাষ হয়েছে পাঁচ হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে। আবাদ ভালো হওয়ার পাশাপাশি দাম বেশি পেয়ে খুশি চাষিরা। ভালো দাম এবং কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সুযোগ-সুবিধা পেলে সামনে পাটের চাষ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৯৬০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ৮১২ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছিল পাঁচ হাজার ৮৬০ হেক্টর। এবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে এক হাজার ২২২ হেক্টর। আর বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় আবাদ হয়েছে এক হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে।

এছাড়া রানীসংকৈল উপজেলায় এক হাজার ১০০ হেক্টর, পীরগঞ্জ উপজেলায় এক হাজার হেক্টর, হরিপুর উপজেলায় ৮৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। জানা গেছে, এ অঞ্চলের কৃষকরা দেশি, তোষা, মেশতা ও উঁচু মাটিতে কেনাফ এইচ বি-৯৫ জাতের পাট আবাদ করেছেন। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ হয়েছে বেশি।

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো ও শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বর্ষার নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবাতে পানি থাকায় পাট জাগ দেওয়ার কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষকদের। তারা জানান, পাটের ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ১২-১৪ মণ হয়ে থাকে এবং খারাপ হলে ৮-৯ মণের মতো হয়। কয়েক বছর আগে প্রতি মণ পাটের দাম ছিল এক হাজার ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। এ বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা মণ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আলাদী হাটের পাট ব্যবসায়ী মো. গোলাম রব্বানী, ঠাকুরগাঁও রোডের মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী ও ফারুখ রহমান বলেন, এ বছর পাটের ফলন ভালো। বাজারে দামও বেশি। প্রতি মণ পাট ২১০০ থেকে ২২০০ টাকা করে ক্রয় করছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের বড় ভেলাজান গ্রামের কৃষক মনসুর আলী ও মজিবর রহমান বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় দাম ভালো পেয়েছি। ভালো দাম পেলে আগামীতেও পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে।’

ঠাকুরগাঁও  উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, ‘এ বছর কৃষকরা পাট চাষ করে ফলন ভালো পেয়েছেন। বাজারে পাটের দাম ভালো। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উত্তরের অবহেলিত জেলাগুলোর মধ্যে ঠাকুরগাঁও একটি। এ জেলায় ভারী কোনো শিল্পকারখানা না থাকায় কৃষি কাজই এ জেলার মানুষের একমাত্র আশা ভরসা।’

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধান, গম, ভুট্টা আলু, পাট প্রভৃতি ফসল আবাদ করাই মানুষের পেশা। ঠাকুরগাঁওয়ে এবার  পাটের আবাদ ভালোই হয়েছে। বাংলাদেশের এককালের প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালি আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছিল। বর্তমানে অন্যান্য ফসলের তুলনায় পাটের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে পাট চাষ দিন দিন  বাড়ছে। সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলজান নদীপাড়া গ্রামের কৃষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি এক একর জমিতে পাট চাষ করছি। এতে আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। আমরি এক বিঘা জমিতে ১২ মণ পাট হয়েছে। এক বিঘা জমির পাটের আশ ছাড়িয়ে বাজারে এক ২১০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। বাকি পাট কেটে জাগ দিয়েছি আশা করি পাট বিক্রি করে লাভবান হবো।