শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি আবাদের অন্যতম প্রধান ফসল আমন। প্রতি বছর জেলায় আমনের ফলন হয় প্রচুর। কিন্তু এ বছরের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। প্রতিকূল আবহাওয়া আর সারের দাম বেশি ও অপর্যাপ্ত বৃষ্টির কারণে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি হলেও এবার তার দেখা নেই। শ্রাবণের ২৩ দিন পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি স্বাভাবিক বৃষ্টির। আষাঢ়ের মাঝামাঝিতে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেও শ্রাবণে তেমন বৃষ্টি হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মুথরাপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, শিবগঞ্জ, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গীসহ অনেক এলাকার কিছু জমিতে এখনও আমন রোপণ করতে পারেননি কৃষকরা। গত কয়েকদিন ধরে দেখা যায় শ্যালো মেশিন ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে অনেকে জমিতে সেচ দিয়ে আমনের চারা রোপণ করছেন। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের চারা লাগানোর কয়েক দিনের মধ্যেই জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। সেচ দিয়ে চারা রোপণ করা হলেও কয়েক দিন পরই জমিতে পড়ছে পানির টান। রোদে লালচে হয়ে যাচ্ছে ধান গাছ। পর্যাপ্ত পানির অভাবে ক্ষেতে সেচ, আগাছা পরিষ্কার, রোগ ও পোকার আক্রমণ রোধেও কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গতবার আমাদের এদিকে এতো বৃষ্টি হয়েছিল যে ধানের চারা পানিতে ডুবে যাচ্ছিল। এবার রোদের তাপ এমন যে মাটি থেকে ধুলা উড়ছে।’
সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের আলাদীহাট এলাকার কৃষক মনছুর ইসলাম বলেন, ‘মেশিনের পানি দিয়ে ধানের চারা রোপণ করছি। এতে খরচ বেড়েছে, পর্যাপ্ত টিএসটি সার পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও দাম বেশি। এবার ধানের ফলন কেমন হবে আল্লাহই ভালো জানেন। এভাবে আর কতদিন চলবে তা ভেবে পাচ্ছি না।’
ভাইলার হাট এলাকার কৃষক বদিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে। আবার রসিদ চাইলেই বিক্রেতারা বলেন সার নেই। তাহলে কীভাবে কৃষিকাজ করব আমরা?’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আবু হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে সমস্যা অনেক কমে যাবে। সারের সংকট ও দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জেলায় সারের কোনো সংকট নেই। সারের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে অনেক দোকানদারকে ইউএনও মহোদয় জরিমানা করেছেন।’
ডিসি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সারের বাজারে কৃষি অফিসার ও ইউএনওদের মনিটর জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সার ও বীজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে সভা হয়েছে। যদি কেউ কৃত্রিমভাবে সারের সংকট তৈরি করেন বা করার চেষ্টা করেন তাহলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
জেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় এক লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এক লাখ ৩৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ শেষ হয়েছে। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। |