শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: সততা, নিষ্ঠা আর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি তার শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো অকাতরে বিলিয়েছেন হাজারো ছাত্রছাত্রীদের মাঝে। কিন্তু জীবন বাস্তবতা ও নিয়তির কি নির্মম পরিহাস, জীবনের সায়াহ্নে এসে ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে তাকে। এ শিক্ষকের নাম আবদুস সালাম (৭০)। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এ শিক্ষক পায়ের ব্যথায় স্বাভাবিক চলাফেরা করতেও অক্ষম। হাঁটেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
প্রবীণ এ শিক্ষকের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি ওই উপজেলার দারুস সালাম সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ। শিক্ষতার পেশায় তিনি নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময়। এখন এ প্রতিষ্ঠানের কেউ রাখে না তার খোঁজ।
শিক্ষক আবদুস সালাম জানান, ১৯৯৮ সালে ধান বোঝাই ট্রাক্টর তার পায়ের ওপর পড়ে যায়। দু’পায়ের মাংসপেশীতে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় এবং বাম পায়ের টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়ায় তিনি চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। পরে বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজ-হেকিম দেখালেও তা ঠিক হয়নি। নিজের শারীরিক অক্ষমতার কারণে অনিচ্ছাকৃতভাবেই সরে দাঁড়ান শিক্ষকতা পেশা থেকে।
চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তার পরিবার। এক সময় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারলেও অভাব-অনটনের মাঝে সংসারের চাকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছে। দাম্পত্য জীবনের এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে দিনাতিপাত করেন। পরে বাধ্য হয়েই নেমে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে। লজ্জা আর অপমানে মুখ লুকাতে নিজ এলাকা ছেড়ে দূরে গিয়ে ভিক্ষা করেন তিনি।
তার একমাত্র সম্বল তিন শতক জমিও তিনি লিখে দেন মসজিদের নামে। ছেলেমেয়েকে পড়াশোনাও করাতে পারেনি। সংসারের হাল ধরতে মাধ্যমিকের গণ্ডি না পেরুতেই কাঠমিস্ত্রির কাজে লেগে যায় ছেলে। বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে মেয়ের। খরচের কারণে বিয়ে দিতে পারছেন না, চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জানালেন এ শিক্ষক। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়ে এবং অসুস্থ ও বৃদ্ধ শরীর নিয়ে জীবনের শেষ সময়ে এসে আবদুস সালামের মনে এ প্রশ্ন বারবার উঁকি দেয়, দীর্ঘ ২২ বছর একটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হয়ে কী পেলেন তিনি।