শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও : বহুবিধ ব্যবহারের কারণে দেশে দিন দিন বাড়ছে ভুট্টার চাহিদা, বাড়ছে আবাদ। ভুট্টা চাষে খরচ যেমন কম, অন্যদিকে ফলন ও লাভও বেশি। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকরাও ঝুঁকছেন এ ফসল আবাদে। তবে চলতি মৌসুমে ভুট্টা গাছে দেখা দিয়েছে ‘কাটুই’ নামে ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এ পোকার প্রাদুর্ভাব। এ কারণে এখন অনেকটাই দিশাহারা কৃষকরা।
জানা যায়, এ অঞ্চলের আবহাওয়া ভুট্টা চাষের অনুকূলে থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। গমের তুলনায় ভুট্টা ও মরিচের দামও ফলন বেশি হওয়ায় এ ফসল দুটি চাষের দিকে ঝুঁকছে কৃষক। দেশে আমিষের চাহিদা বেশি থাকায় ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড়সহ উত্তর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট বড় হাঁস, মুরগি ও গবাদি পশুর খামার। বৃহৎ কোম্পানিগুলো ছাড়া স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা এসব খামারের প্রধান খাদ্য হলো ফিড। বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ফিড মিল। এসব মিলে সারা বছর প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা ক্রয় করা হয়ে থাকে। গম ও ভুট্টা থেকে আটা, ময়দা, বিস্কুট, পাউরুটিও হয়। দেশীয় বাজারে ভুট্টার বেশ চাহিদা থাকে, যার ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা এ ফসলটি চাষে উৎসাহিত হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় ২০১৮-১৯ মৌসুমে ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে, ২০১৯-২০ মৌসুমে ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে, ২০২০-২১ মৌসুমে ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে, ২০২১-২২ মৌসুমে ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৩৩ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২৩ মৌসুমে এবার এখন মোট ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৩৮ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৮৫ হাজার মে.টন ভুট্টা। সর্বশেষ চলতি বছর এ পর্যন্ত ভুট্টা আবাদ হয়েছে ৩২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে। এখনও ভুট্টা আবাদ চলমান রয়েছে।
প্রতি হেক্টর জমিতে খরচ হয়েছ ৯০-৯৫ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টর জমিতে ৮.৬ মে.টন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প খরচে অল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জনকারী ফসল হওয়ায় কৃষক গম কাটার পরে খরিপ মৌসুমি ভুট্টা লাগাতে বেশি ঝুঁকে পড়ে। উচ্চ ফলনশীল ভুট্টার মধ্যে রয়েছে পাইনিয়ার ৩৩৫৫, এন এইচ ৭৭২০, এনকে ৯৪০, সুপার সাইন ২৭৪০। সোনার বাংলা, রকেট ৫৫ ইত্যাদি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান নদীপাড়া গ্রামের কৃষক মো. উসমান আলী বলেন, ‘ধারদেনা করে দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করছি কিন্তু ‘কাটুই’ পোকা ভুট্টা ক্ষেত কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। বিষ স্প্রে করেও তেমন কাজ হচ্ছে না। এতে ভুট্টা ক্ষেত নিয়ে মহা চিন্তায় আছি।’
ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার বাঁশগারা গ্রামের কৃষক আলম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ২ একর জমিতে মৌসুমি পাইনিয়ার ৩৩৫৫ উচ্চ ফলন শীল জাতের ভুট্টা আবাদ করছি কিন্তু ‘কাটুই’ পোকা ভুট্টা ক্ষেত কেটে শেষ করে দিয়েছে। বিষ স্প্রে করেও তেমন কাজ হইনি। তাই ভুট্টাক্ষেত ভেঙে গম বুনছি।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মানুন জানান, ‘কাটুই’ পোকার আক্রমণ থেকে ক্ষেত বাঁচাতে ভুট্টা গজানোর পরপরই ভালো মানের বিষ দিয়ে সপ্তাহে অন্তত এক দিন গাছ ভিজিয়ে স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, ভুট্টার আয়ুকাল ১১০-১৩০ দিন হওয়ায় এবং ফলন বেশি ও চাহিদা থাকায় এ ফসলটির আবাদ দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষে প্রশিক্ষণ ও সরকারিভাবে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। কৃষকরা যেন তারা অধিক ফলন ফলাতে পারে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে এবং দেশর খাদ্য ঘাটতি পূরণে এবং দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।