Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:28 pm

ঠাকুরগাঁওয়ে সূর্যপুরী আমগাছ দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জেলায় কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তারই একটি তিন বিঘা জমিজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা প্রকাণ্ড সূর্যপুরী আমগাছ। আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গী উপজলোর আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তে মণ্ডুমালা গ্রামে অবস্থিত। গাছটির ডালপালার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ ফুট। এটির আনুমানিক বয়স প্রায় ৩০০ বছর। বৃহৎ আমগাছটি প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজ চোখে দেখার জন্য ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রশাসন বলছে, আমগাছটি যেহেতু ব্যক্তিমালিকাধীন তাই গাছের মালিক চাইলে সেখানে পিকনিক স্পট, রেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্ট তৈরি করতে পারেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

আমগাছটিকে ২০১০ সালে মন্ত্রিসভায় দেশের জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা দেয়া হয়। দুই বিঘার বেশি জায়গাজুড়ে শতবর্ষী আমগাছটি দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। গাছটির উচ্চতা আনুমানকি ৮০-৯০ ফুট। মূল গাছের ঘের ৩৫ ফুটরে কম নয়। গাছরে তিনদিক থেকে ১৯টি মোটা ডালপালা বেরিয়ে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে। দূর থেকে মনে হবে, অনকেগুলো আমগাছ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। মৌসুমভরে এ সময় আমের ভারে আরও নুয়ে থাকে গাছটা। পৈতৃক সূত্রে এ গাছের মালিক নূর ইসলাম ও সাইদুর ইসলাম নামে দুই ভাই।

গাছটির বিশালতা দেখার মতো। গাছের নিচে অন্য কোনো গাছ বা আগাছা নেই। একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয়, সবুজ রঙের একটি টিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে। সব মিলিয়ে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য।

ঢাকা থেকে আসা সুমি আক্তার নামে এক দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি ১৮ ঘণ্টা ভ্রমণ করে এসেছি। আমি একটি ভিডিও দেখেছিলাম, বালিয়াডাঙ্গীতে একটি বড় আমগাছ আছে। আজকে নিজের চোখে দেখে আমি বিমোহিত হয়েছি। আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই, আমরা যারা অনকে দূর থেকে দেখতে আসি, এতদূর থেকে আসার পর অবশ্যই বিশ্রাম ও খাবারের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেটির ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে একটি রেস্ট হাউস, ভালো মানের রেস্টুরেন্ট এবং একটি মানসম্মত ওয়াশরুম স্থাপন করা জরুরি। এতে করে দর্শনার্থীরা উপকৃত হবেন।

মালিকপক্ষরে একজন মোল্লা সাহেব বলনে, এখানে জমির খাজনা, সরকারি ট্যাক্সের কারণে ভেতরে দর্শনার্থী প্রবেশ বাবদ ২০ টাকা নেয়া হয়। এখানে বিধিনিষেধ দেয়া হলেও মানুষ মানে না। গত বছর ৫০ মণ আম পেয়েছি। এ বছর আরও বেশি পাব আশা করি। সূর্যপুরী জাতের এ আমগাছরে আম প্রতি কেজি সর্বনি¤œ ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

চট্টগ্রাম থেকে আমগাছটি দেখতে এসেছেন জিয়া। তিনি জানালেন, ফরিদপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিনি দুটি শতাব্দী প্রাচীন আমগাছ দেখেছেন। কিন্তু এ আমগাছটি দেখে তিনি হতভম্ব হয়ে গেছেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, বালিয়াডাঙ্গী উপজলোর এই আমগাছরে সঙ্গে ওই দুটি আমগাছরে কোনো মিল নেই। এ আম গাছটি একবারইে ভিন্ন! ডালপালা মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

বালিয়াডাঙ্গী সমিরউদ্দিন স্মৃতি কলেজের অধ্যক্ষ বেলাল রব্বানী ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করছেন। তিনি জানান, সূর্যপুরীর নামকরণ বা উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে একেবারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। জনশ্রুতি আছে, আনুমানিক ৩০০ বছর আগে তৎকালীন ভারত বর্ষের উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরে সূর্যপুর এলাকায় এই আমের বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। ধারণা করা হয়, ওখান থেকেই আমের জাতটি এখানে আসে। যেহেতু এই আম অত্যন্ত সুস্বাদু, তাই নাম ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি। আশপাশের এলাকায় দ্রুত পরিচিতি পায় এ আম। ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সূর্যপুরী আমগাছ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা. যোবায়ের হোসেন বলেন, জায়গাটিতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলমান রয়েছে।