Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:41 am

ঠাকুরগাঁও পাক হানাদারমুক্ত দিবস আজ

প্রতিনিধি, ঠাকুরগাঁও : আজ ৩ ডিসেম্বর। ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত হয়। ঠাকুরগাঁও তখন মহকুমা ছিল। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা মিলে ওই মহকুমা ছিল। এ অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই পিছু হটতে শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। চূড়ান্ত বিজয় আসে আজকের এই দিনটিতে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাক হানাদাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সহজ সরল মানুষের ওপর। এ সময় হানাদাররা গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এরপর ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত ঠাকুরগাঁওয়ের ইসলামনগর থেকে ছাত্রনেতা আহাম্মদ আলী, ইয়াকুব আলী, মাজারুল, দবিরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান ও সিরাজউদ্দীনকে ধরে এনে পাক হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁও ক্যাম্পে আটক করে রাখে। পরে তাদের হত্যা করে টাঙ্গন নদীর পাড়ে ফেলে রাখা হয়। যেখানে বর্তমানে বধ্যভূমি গড়ে তোলা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শক্রমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাক বাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে। ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচুর গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শক্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোরে ঠাকুরগাঁও শহর শক্রমুক্ত হয়।

সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধার পিতা শেখ শহর আলী ও তার ভাই শেখ বহর আলীসহ ১৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে হত্যা করে তাদের মরদেহ আব্দুর রশিদ ডিগ্রি কলেজের পাশের একটি কূপে ফেলে দেয়। হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা গণহত্যা চালায় সদর উপজেলার জাঠিভাঙ্গা গ্রামে। সেখানে স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় আশপাশের অনেক গ্রামের প্রায় তিন হাজার নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে পাক বাহিনী গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। পরে তাদের মরদেহ মাটি চাপা দেয়া হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক স্থানে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী ও তার দোসররা। এরই মধ্যে সুসংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর পতনের পর এ এলাকার সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। আনন্দ উদ্বেলিত কণ্ঠে ‘জয়বাংলা’ ধ্বনি আর হাতে প্রিয় স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে তরুণ-যুবক সবাই। এদিন সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরসহ জনপদ ও লোকালয়ে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দের মিছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে ঠাকুরগাঁও শহর।
দিবসটি পালনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কার্যালয় চত্বর থেকে একটি আনন্দ র‌্যালি বের হয়ে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় গিয়ে শেষ হবে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম বিডি হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও’র উদ্যোগে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানা যায়।