শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: দেশের উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত। হিমালয়ের অনেক কাছে হওয়ায় এখানে এখন অসহনীয় শীত। এতে ছিন্নমূল মানুষেরাই বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। আবহাওয়া অফিসের সূত্রমতে, ঠাকুরগাঁও জেলায় গতকাল সোমবার সর্বনিন্ম তাপমাত্রা সাত দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সকাল থেকে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়নি।
হঠাৎ জেঁকে বসা শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন কর্মমুখী সাধারণ মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে শীতের প্রকোপ থেকে মুক্তি পেতে অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন। কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় শীতের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এ অঞ্চলে। দুপুরের পর কুয়াশার চাদর ভেদ করে সূর্যের আলো দেখা গেলেও কমছে না শীতের প্রকোপ। রোববার সন্ধ্যা থেকে জেঁকে বসেছে কনকনে শীত। কনকনে শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শিশু ও বয়স্করা।
ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে বেড়ে চলেছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। হঠাৎ শীতে শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা চরম অবস্থায় পৌঁছেছে। ঠাণ্ডার কারণে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না তারা। হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ জেলা কখনও কখনও সারাদিনই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে। দুই দিন ধরে এখানে দিনের বেলায় কিছু সময় সূর্য দেখা গেলেও বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈতপ্রবাহ। অন্যদিকে রাতের বেলায় বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে কুয়াশা ঝরছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি সূত্রে জানা যায়, শীতার্তদের সহায়তায় সরকারিভাবে এরই মধ্যে ২৬ হাজার ৩০০ কম্বল বরাদ্দ পেয়েছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া আট লাখ টাকা এসেছে চাহিদা অনুযায়ী শীতবস্ত্র ও কম্বল কেনার জন্য।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান বলেন, এবার জেলায় শীতের প্রকোপটা একটু বেশি। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত পাওয়া বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। তাই জেলার শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণের জন্য আরও ২৫ লাখ টাকা ও এক লাখ কম্বল অতিরিক্ত চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এসময় তিনি বিত্তবানদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।
এদিকে দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে শীত জেঁকে বসায় খেটে খাওয়া মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। গত কয়েক দিনের ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গতকাল সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পঞ্চগড়ে গত রোববার রাতে শুরু হওয়া বৃষ্টির মতো কুয়াশার স্থায়িত্ব ছিল গতকাল সকাল পর্যন্ত। বেলা পৌনে ১১টায় সূর্যের দেখা মিললেও বাতাসের সঙ্গে পেরে উঠছে না রোদের তীব্রতা।
এর আগে গত শনিবার ও শুক্রবার তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এর মধ্যে শনিবার সকাল ৯টায় ৯ দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শুক্রবার সকাল ৯টায় আট দশমিক চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।
দুই দিন ধরে তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও রাতভর বাতাস বইতে দেখা যায়। শীতের দাপট বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, উত্তরের হিমেল বাতাসের পাশাপাশি রোদ উঠতে দেরি হওয়ায় বেশি ঠাণ্ডা অনুভূত হচ্ছে। আকাশে কিছুটা মেঘ রয়েছে। এছাড়া আকাশের উপরিভাগ ঘন কুয়াশা আর জলীয় বাষ্পে ঢাকা থাকায় সূর্যের আলো দেরিতে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছাচ্ছে। আগামী আরও কয়েক দিন এ এলাকায় এ রকম আবহাওয়া থাকতে পারে বলে জানান তিনি।