Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:54 pm

ঠিকানায় নেই সাক্ষীরা, আটকে আছে তাজরীনের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাত বছর আগে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির মামলায় যাদের সাক্ষী করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশকেই পাওয়া যাচ্ছে না। সাক্ষীদের ঠিকানায় বারবার পরোয়ানা পাঠানো হলেও তা ফেরত আসছে। এতে আটকে আছে মামলা। সূত্র: বিডিনিউজ।

তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক একেএম মহসীন উজ জামান খান বলছেন, অধিকাংশ পোশাক শ্রমিক সাক্ষীদের যে ঠিকানা অভিযোগপত্রে দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো ছিল অস্থায়ী। মামলার বিচার চলার মধ্যেই তারা সেই ঠিকানা পরিবর্তন করায় তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠন করার পর চার বছরে রাষ্ট্রপক্ষে ১০৪ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

গত ৭ নভেম্বর সবশেষ তারিখেও রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষীকে হাজির করতে পারেনি। তবে সেদিন হাজিরা দিয়েছিলেন আসামিরা। পরে বিচারক আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি নতুন তারিখ ঠিক করে দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের বর্তমান আইনজীবী মো. মোর্শেদ উদ্দিন খান জানিয়েছেন।

এ পর্যন্ত যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা হলেনÑমামলার বাদী  আশুলিয়া থানার এসআই খায়রুল ইসলাম, মামলার রেকর্ডিং কর্মকর্তা এএসআই মো. শাহ জালাল মিয়া, আশুলিয়া এলাকার মো. সেনা মিয়া, তাজরীন ফ্যাশনসের সুয়িং অপারেটর মাহে আলম, কোয়ালিটি অপারেটর রাকিব হাসান, অপারেটর লাইলী বেগম ও প্রত্যক্ষদর্শী আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের সবুর মণ্ডল।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে সাভারের আশুলিয়ায় নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের মালিকানাধীন তাজরীন ফ্যাশনসে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১১২ শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং দুই শতাধিক শ্রমিক আহত ও দগ্ধ হন। ওই ঘটনায় তাজরীন ফ্যাশনসের মালিক দেলোয়ার ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

অন্য আসামিরা হলেনÑপ্রতিষ্ঠানটির লোডার শামীম, স্টোর ইনচার্জ (সুতা) আল আমিন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আনিসুর রহমান, সিকিউরিটি সুপারভাইজার আল আমিন, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু, অ্যাডমিন অফিসার দুলাল উদ্দিন, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, সিকিউরিটি গার্ড রানা ওরফে আনোয়ারুল, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক, প্রোডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল। তাদের মধ্যে মোবারক হোসেন মঞ্জুর ও শহীদুজ্জামান দুলাল পলাতক।

মামলাটি তদন্তের পর ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন সিআইডির পরিদর্শক একেএম মহসীন উজ জামান।

এদিকে বিচারকাজের এই স্থবিরতার মধ্যেই মামলার প্রধান আসামি তাজরীন ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন বিদেশে অধ্যয়নরত ছেলের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট ফেরত চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন।

মামলার সবশেষ তারিখে দেলোয়ার বিচারকের আদেশে পাসপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে একটি হলফনামা আদালতে জমা দেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী এটিএম গোলাম গাউস।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. মোর্শেদ উদ্দিন খান বলেন, ‘বিচারক বলেছেন, আসামির যে সন্তানরা দেশে রয়েছেন (কন্যাসন্তান) তাদের পাসপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার শর্তে তিনি নিজের পাসপোর্ট ফেরত পাবেন।’

মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে না পারায় এর আগে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী শাহানাকে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসএম সাইফুল ইসলাম ভর্ৎসনাও করেছিলেন।

সাক্ষী হাজিরের বিষয়ে সে সময় ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি খন্দকার আবদুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ‘সাক্ষীর বিষয় আমাকে ঠিকমতো জানানো হয় না। অথচ এসব স্পর্শকাতর মামলার প্রতিটি পদক্ষেপের খবর আমাকে জানানোর জন্য সব অতিরিক্ত পিপি ও সহকারী পিপিকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তা সত্ত্বেও আমার কথা মানা হচ্ছে না।’

বাংলাদেশ প্রগতিশীল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনও বলেছিলেন, জনগুরুত্বসম্পন্ন এ মামলার বিচার তাড়াতাড়ি ও সুষ্ঠুভাবে নিষ্পত্তি হলে গার্মেন্টে অবহেলার কারণে আগুন লাগার ঘটনা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা কমে যেত।