অনেকের মাঝেমধ্যে ঠোঁটের দুই কোণে কিংবা এক কোণে ফাটা ঘা হতে দেখা যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ রোগের নাম এঙ্গুলার চিলাইটিস। জ্বর, সর্দিকাশির পরও মুখে ঘা হতে পারে। অনেকে এ ধরনের ঘায়ের সঙ্গে এঙ্গুলার চিলাইটিস মিলিয়ে ফেলেন। কিন্তু দুটি রোগের কারণ, লক্ষণ, অবস্থা ভিন্ন।
কী কারণে হতে পারে: পান, সুপারি, তামাক সেবন ও গুলের ব্যবহারেও হতে পারে এমন সমস্যা। পানমসলা খাওয়ার অভ্যাসেও আক্রান্ত হতে পারেন এঙ্গুলার চিলাইটিসে। বয়স্ক ব্যক্তিরা কেউ কেউ মুখে ডেনচার ব্যবহার করেন বা তাদের মুখের কোণে ত্বক ঝুলে যেতে পারে। এ কারণেও ঠোঁটের কোণে ঘা হয়। এঙ্গুলার চিলাইটিস হলে ঘায়ের সঙ্গে রক্তপাত, ফোসকা, ত্বক ফেটে যাওয়া, খসখসে, লালচে রং, ফোলাভাব ও চুলকানি হতে পারে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধ: অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে বা ত্বকে ব্যবহারে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ কমায়। দাঁতে ডেনচার ঠিকভাবে সেট করা জরুরি। আঁকাবাঁকা দাঁত ঠিক করতে আধুনিক চিকিৎসা নিতে পারেন। পুষ্টির স্বল্পতা থাকলে খাদ্যতালিকায় প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিন বি-সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খাবারের সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন বি-জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা টপিক্যাল স্টেরয়েড ঠোঁটের ফাটা কোণে ফোলাভাব ও ব্যথা উপশম করে। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। লিপ বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি আপনার ঠোঁটের কোণের ত্বককে আর্দ্র ও সুরক্ষিত রাখবে। এঙ্গুলার চিলাইটিসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি ঠোঁটের কোণে বরফ দিতে পারেন। মসলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে ব্যথা, ফোলা ও জ্বালাপোড়া কমবে। রোদ ও খুব ঠাণ্ডা বাতাস থেকে দূরে থাকুন।
ত্বকের অ্যালার্জি আছে, এমন সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং প্রচুর পানি পান করুন। ঠোঁট আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন। ধূমপান বা তামাকজাত পণ্য, পান, সুপারি, জর্দা এড়িয়ে চলুন। বারবার ঠোঁট জিব দিয়ে চাটার অভ্যাস থাকলে ত্যাগ করুন। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। ঠোঁটের ঘা সাধারণত গুরুতর হয় না। চিকিৎসা শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহ পর সেরে যায়। তবে গুরুতর ঘা চিকিৎসা না করালে ত্বকে দাগ বা ত্বক পাতলা হতে পারে। চিকিৎসার পরও আবার দেখা দিতে পারে রোগটি। কারও ক্ষেত্রে এই ঘা দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এমনকি সারাজীবন এ অবস্থা চলতে পারে। তাই প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে ঘা নিয়ন্ত্রিত রাখা।
ডা. শারমীন জামান
ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন, ফরাজী ডেন্টাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার
বনশ্রী, ঢাকা