শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা হলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে বের হয়ে আসার হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প। এর আগে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটি থেকে বের হয়ে যাবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এমন বক্তব্য অস্বীকার করেছিল। গত সোমবার কী করা হবে তা স্পষ্ট না করলেও ট্রাম্প বলেছেন, ‘ডব্লিউটিও থেকে যুক্তরাষ্ট্র সুবিধা পায় না। আমরা এখনই কিছু করার পরিকল্পনা করছি না। তবে সংস্থাটি আমাদের যথাযথ মূল্যায়ন না করলে কিছু একটা করব।’ ট্রাম্পের মন্তব্য এমন সময় এলো, যার কয়েক ঘণ্টা আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, মার্কিন শুল্ক তাদের নিজেদের গাড়ি শিল্পকে ধ্বংস করবে। খবর রয়টার্স।
হোয়াইট হাউজে নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ডব্লিউটিও যুক্তরাষ্ট্রকে খুব, খুব, খুবই খারাপভাবে মূল্যায়ন করে। আশা করি তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করবে।
একটি প্রতিবেদনে ট্রাম্পের শুল্কারোপ নীতিকে ডব্লিউটিওর আইন লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রাম্প এ মন্তব্য করেছেন। গত রোববার সংবাদমাধ্যম আজিও দাবি করে, ইতোমধ্যে সংস্থাটি থেকে বের হওয়ার প্রক্রিয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বাণিজ্য সচিব উইলবার রস অবশ্য বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে যাবে কিনা সেটা এখনই আলোচনার সময় না।
তিনি বলেন, ‘ডব্লিউটিও নিজেও জানে যে কিছু সংস্কার প্রয়োজন। আমরা দেখতে চাই আসলে কি হয়। তবে এখনই বেরিয়ে আসা সমাধান নয়।’ রস বলেন, আমরা প্রকাশেই বলেছি তাদের সংস্কার প্রয়োজন।
ট্রাম্পের আগ্রাসী ভূমিকায় মিত্রদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। গত বছর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে টিপিপি চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। নাফটা চুক্তির সংস্কার নিয়ে কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।
এদিকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শুল্কের প্রতিক্রিয়ায় গত মাসে হুইস্কি, মোটরসাইকেল, জুতা, কয়েক ধরনের কাপড়, ওয়াশিং মেশিন ও কমলার রসসহ বেশকিছু পণ্যে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে ইইউ। জোটের ২৮টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি করা প্রায় ৩২০ কোটি ডলারের পণ্য থেকে এ শুল্ক নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে ইউরোপ। এর প্রতিক্রিয়ায় ইতোমধ্যে ইইউর গাড়িতে অতিরিক্ত শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, ‘এ শুল্ক তুলে নেওয়া না হলে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ইউরোপের সব ধরনের গাড়িতে ২০ শতাংশ শুল্ক বসাবো।’ ইইউ থেকে আমদানি করা ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে এখনই আড়াই শতাংশ শুল্ক দিতে হয়; পিকআপ ট্রাকের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের গাড়িতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ মাত্র ১০ শতাংশ।
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের পাল্টা হিসেবে ১২ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের মার্কিন পণ্যেও শুল্কারোপ করেছে কানাডা। গত ১ জুলাই থেকে তা কার্যকরও হয়েছে।
গত মার্চে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ ও ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে প্রতিবেশী মেক্সিকো ও কানাডা এবং ইউরোপকে এ শুল্ক থেকে ছাড়া দিলেও এক মাস পরে তাদের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
অভ্যন্তরীণ শিল্পের সুরক্ষা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য দেশের ভেতরেই আরও চাকরির সুযোগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা নেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে চীন থেকে আমদানি করা বাৎসরিক ৪৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সমপরিমাণ পণ্য আমদানিতে বসেছে নতুন শুল্ক। পাল্টা পদক্ষেপে হাজারের ওপর মার্কিন পণ্যে শুল্ক দিয়েছে বেইজিংও।