মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: বছরের ব্যবধানে মুনাফার চমক দেখিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ডরিন পাওয়ার। এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেড়েছে প্রায় এক হাজার ৮০০ শতাংশ বা ১৮ গুণ। বিষয়টি অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি নিজেদের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যবসা ভালো থাকায় তারা কাক্সিক্ষত মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা হয়েছে ৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৫-১৬ তে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা ছিল তিন কোটি ৮৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ বছর মুনাফা বেড়েছে ১৮ গুণের বেশি। যদিও এ বছর কোম্পানির বিক্রি ব্যয় বেড়েছে ৩৬৯ শতাংশ। আগের বছর প্রতিষ্ঠানটির বিক্রি ব্যয় ছিল ৭৯ কোটি ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। সর্বশেষ এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রি ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৭৩ কোটি ৫৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ কর্মকর্তা আফরোজ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, সর্বশেষ অর্থবছরে আমাদের দুটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে এসেছে। এ দুই সহযোগী প্রতিষ্ঠানের আয়ও আমাদের কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যে কারণে আমাদের মুনাফা বেড়ে গেছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান ক্রমেই ভালো করছে। যার প্রতিফলন প্রতি আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) বেড়েছে ২৬ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ১৭) এ মুনাফা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪.১৯ টাকা। যার পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩.৩৩ টাকা। এ হিসাবে ইপিএস বেড়েছে ০.৮৬ টাকা বা ২৬ শতাংশ। এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় হয় সাত টাকা ৫৭ পয়সা। গত বছর যার পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৫ পয়সা।
কোম্পানি কর্তৃপক্ষের দাবি তাদের মুনাফা হওয়ার মূল কারণ এ বছর প্রতিষ্ঠানটির সাবসিডিয়ারি দুটি কোম্পানির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ বছর উৎপাদনে আসা প্রতিটি কোম্পানির ৫৫ মেঘাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করে। ফলে এখান থেকে আয় বেড়েছে ৩৩২ দশমিক ৯০ শতাংশ। একইসঙ্গে বিক্রি ব্যয়, মোট মুনাফা, করপূর্ব মুনাফা এবং করোত্তর মুনাফাসহ অন্যান্য পরিচালন ও আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে।
এদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থবছরে ফেনী পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে আয় করে ৩৭ কোটি ২৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। আর নরসিংদী পাওয়ার প্লান্টের মাধ্যমে আয় হয় ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। একইভাবে টাঙ্গাইল পাওয়ার প্লান্ট থেকে প্রতিষ্ঠানটির আয় হয় ৩৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এ ক্যাটেগরির এ প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মোট শেয়ারের ৭৫ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের কাছে। এছাড়া ১৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ শেয়ারধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বাকি ৯ দশমিক ২২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে।
সম্প্রতি বাজার পতনের জের ধরে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর কিছুটা কমে গেছে। দুই সপ্তাহ আগে এ শেয়ারের দর ছিল ১০৬ টাকা। গতকাল সর্বশেষ যা লেনদেন হয় ১০৪ টাকায়। গত এক বছরের মধ্যে এ শেয়ার সর্বোচ্চ ১৫৮ টাকা এবং সর্বনি¤œ ৯৫ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়।