Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 1:19 pm

ডলারের উচ্চমূল্যে ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকরা

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের আমদানিকারকরা বাংলাদেশ ব্যাংক-নির্ধারিত ডলারমূল্য পাচ্ছে না। বরং এর চেয়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দামে ডলার কিনে এলসির মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এমনও আছে ডলারপ্রতি ১০ টাকাও বেশি দিতে হয়। এতে অল্প সময়ে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যয় প্রায় ১০ শতাংশের মতো বাড়ছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের খাদ্যপণ্যসহ তেল, জ্বালানি, গ্যাসসহ বেশকিছু পণ্যের দাম হ্রাস পাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে আমদানিকারকদের চিন্তা বাড়ছে। এতে আমদানিকারকরা আর্থিক সংকটে পড়তে পারে।  

চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন ব্যবসায়ী ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে জাহাজ আমদানি করেন। গত মে মাসের শেষের দিকে তার জাহাজ আমদানির জন্য এলসি ওপেনের সময় ডলারের মূল্য ছিল ৮৭ ডলার। আর মূল্য পরিশাধে করতে হয় ৯৭ টাকায়। তাও ডলারপ্রতি ব্যাংক রেটের অতিরিক্ত পাঁচ টাকা বাড়তি টাকা দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। এর জন্য দুই সপ্তাহ তাকে ব্যাংকের বড় বড় কর্মকর্তার পেছনে ছুটতে হয়েছে। শুধু তিনি নন, একটি ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সর্বশেষ ৯৮ টাকা করে ডলার মূল্য পরিশোধ করে তেল আমদানি করে। অথচ এ তেলের এলসি খোলার সময় ডলারের বিনিময় হার ছির ৮৯ টাকার কাছাকাছি।

জানা যায়, দেশের আমদানিকারকরা বাংলাদেশ ব্যাংক-নির্ধারিত ৯৪ টাকা ৭০ পয়সা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলারমূল্য পাচ্ছে না। বরং এর চেয়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দামে এলসি পেমেন্টে ডলারমূল্য দিতে হচ্ছে। আর খোলাবাজারে তো ১১২ টাকায় কিনতে হয়। এতে আমদানিকৃত পণ্যের ব্যয় বাড়ছে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের খাদ্যপণ্যসহ তেল, জ্বালানি, গ্যাসসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম হ্রাস পাচ্ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্পের কাঁচামাল, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য, চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক এডি ব্যাংকগুলোর জন্য ডলার বিনিময়ে একই হার নির্ধারণ করে দিলেও অনেক ব্যাংক এ নির্দেশনা মানছে না। উল্টো যথেচ্ছ দাম আদায় করছে।

দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টাকার বিপরীতে ডলারের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে এডি ব্যাংকগুলোর ডলার বিনিময় মনিটরিং করাসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদারের প্রতি সম্প্রতি এক পত্রের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছেন।

বাজার পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, গত দুই মাসের ব্যবধানে আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে পাঁচ শতাংশের বেশি। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। অপরদিকে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে আট শতাংশের মতো, কিন্তু খোলাবাজারে ১৬ শতাংশেরও বেশি। আর খোলাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে ৯৮ টাকা ডলারপ্রতি বিক্রি হলেও গত সপ্তাহের শুরুতে এর দাম ওঠে ১০০ টাকা। আর গত বুধবার ১১২ টাকা লেনদেন হয়।

ইস্পাত ট্রেডিং ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ডলারে পেমেন্ট করায় প্রতি টনে রডের দাম বেড়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত স্ক্র্যাপের দাম কমছে।

এ বিষয়ে প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলস লিমিটেড এবং সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, আমার শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি ওপেন করছি ৮৬ বা ৮৭ টাকায়। আর পেমেন্টের সময় ডলার রেট ১০০ টাকা, ১০২ টাকা ও ১০৫ টাকা নেয়া হয়। একই অবস্থা ভোগ্যপণ্য আমদানির বেলায়। ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো ডলারের দাম নিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেÑএকজন আমদানিকারক কেন এ বাড়তি টাকা পরিশোধ করবেন? এক্ষেত্রে সরকার প্রণোদনা দেবে। ডলারের অতিরিক্ত রেটের কারণে অতিরিক্ত আমদানি ব্যয় হচ্ছে। এরসঙ্গে পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ তো আছে। পাশাপাশি চাহিদা কম এবং লোডশেডিংয়ের কারণে তো উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এসব কারণে তো ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। অথচ চাইলেই তো পণ্যের দাম বাড়াতে পারছি না।