নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলারের দর বৃদ্ধি পাওয়ার পর রেমিট্যান্সে গতি ফিরেছে। গত অক্টোবর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে প্রবাসীরা ১৯৭ কোটি ডলার পাঠিয়েছে, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। গত বছরের অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫২ কোটি ডলারÑ বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
ডলারের দর বৃদ্ধিতেই প্রবাসী আয় বাড়ছে। কারণ এখন প্রতি ডলারে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোও সমপরিমাণ প্রণোদনা দিচ্ছে। ফ?লে বৈধ প?থে দেশে রে?মিট্যা?ন্স আসছে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা পে?য়ে?ছে। যার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে।
তবে গত মঙ্গলবার ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স আয়ে ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার সীমা তুলে নিয়েছে এবিবি ও বাফেদা। এখন থেকে কোনো ব্যাংক চাইলে ইচ্ছামতো প্রণোদনা দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবে। তবে একটি ব্যাংক কত শতাংশ প্রণোদনা দেবে, তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বোর্ড থেকে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর আগের তিন মাস ধারাবাহিকভাবে কমেছে। যেমন জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ও সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। এর আগে জুনে আসে ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার।
জানা গেছে, অক্টোবরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৭৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর বাইরে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংক ১৫ কোটি ৪৪ লাখ, বিশেষায়িত একটি ব্যাংক ৫ কোটি ৮২ লাখ ও বিদেশি ব্যাংকগুলো ৬০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এনেছে।
রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দীর্ঘ মেয়াদি সুফল আসবে না জানিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংÑ সানেম এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, সরকারের আড়াই শতাংশের সঙ্গে আরও বাড়তি আড়াই শতাংশ ডলার রেট বেশি দেবে সবমিেিয় রেমিট্যান্সে ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেÑ এ ধরনের পদক্ষেপ সাময়িক সময়ের জন্য রেমিট্যান্স বাড়াবে, তবে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান হবে না।
তিনি জানান, ব্যাংকগুলো যত বেশি প্রণোদনা দেবে হুন্ডির লোকজন তার চেয়ে বেশি প্রণোদনা দেবে। তাই হুন্ডি যত পর্যন্ত রমরমা থাকবে তত পর্যন্ত বৈধ পথে আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসবে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। পরে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এ দায়িত্ব দেয়া হয় এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর থেকেই সংগঠন দুটি মিলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় এবং আমদানি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে আসছে। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে এই দুই সংগঠন।
বর্তমানে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের দাম ৫০ পয়সা বাড়িয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। ১ ন?ভেম্বর থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের থেকে প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় কিনে আমদানিকারকদের কাছে ১১১ টাকায় বিক্রি করবে ব্যাংকগুলো। এত দিন ১১০ টাকায় ডলার কিনে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির সিদ্ধান্ত ছিল। আর এখন ব্যাংকগুলোর প্রতি মাসের রেমিট্যান্সের ১০ শতাংশ আন্তঃব্যাংক মার্কেটে বিক্রি করতে হবে; যার সর্বোচ্চ দর হবে ১১৪ টাকা।