Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 4:36 pm

ডলারের দাম হুন্ডির পর্যায়ে গেলে ও অর্থ পাচার থামবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডলারের বিনিময় হার হুন্ডির পর্যায় নিয়ে গেলেও অর্থপাচার থামবে না। কারণ ডলারের দর অর্থপাচারকারীদের জন্য কোনো বিষয় নয়। তাই হুন্ডির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ডলারের দর বৃদ্ধি করলেও কোনো লাভ নাই। কারণ এতে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়বে না।

ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে গতকাল বুধবার বৈঠকে এমনটাই মন্তব্য করেছেন দুই সংস্থার প্রতিনিধিরা।

বৈঠকে ডলার মার্কেটে অস্থিরতা, এক্সচেঞ্জ রেট, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংকঋণের সুদহার নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সময়ে নীতিগত যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে তা তুলে ধরা হয় এবং সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়।

এবিবির নেতাদের জানানো হয়, আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ডলারের দাম বর্তমান আবস্থায় ধরে রাখতে হবে। মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ যে কোনো উপায় মোকাবিলা করতে হবে। প্রয়োজনে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদহার বাড়াতে হবে এবং বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে হবে।   

বৈঠক শেষে এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে ডলারের বিনিময় হার হুন্ডির পর্যায়ে নিয়ে গেলেও লাভ হবে না। কারণ ডলারের দর অর্থপাচারকারীদের জন্য কোনো বিষয় নয়। যারা হুন্ডি করে টাকা পাচার করে, তাদের ব্যাংক ১৩০ টাকা দিলে হুন্ডিওয়ালারা ১৪০ টাকা দেবে। কারণ এখানে টাকা কোনো ব্যাপার নয়। এটা তো কালোটাকা। এই কালোটাকা যারা পাচার করে তারা যে কোনো মূল্যেই সেটা করবে। এজন্য হুন্ডির সঙ্গে ডলারের দর মেলানোর কোনো দরকার নেই। তাই বাফেদার ঠিক করে দেয়া মূল্যেই রেমিট্যান্স আনতে হবে।

তিনি বলেন, কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজার নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, কারণ সার্বিক অর্থনীতির তুলনায় কার্ব মার্কেটের বাজার খুব ছোট। এই বাজারে বছরে তিন থেকে চার কোটি ডলার লেনদেন হয়। ফলে কার্ব মার্কেটে ডলারের বিনিময়হার কত বা তাকে মানদণ্ড হিসেবে দেখানোর প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করেন। এসময় দেশের বাইরে আটকে থাকা বকেয়া রপ্তানি আয় দ্রুত দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে আবারও তাগাদা দিয়েছেন গভর্নর বলে জানান তিনি।

সেলিম আর এফ হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্তে ঋণের সুদহার বেড়ে গিয়ে তারল্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে আমানতের সুদহারও বেড়ে যাবে। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এদিকে বৈঠকে শেষে একই কথা জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাফেদা দর দিয়েই রেমিট্যান্স আনতে হবে। হুন্ডির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দর বাড়ালেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে না। কারণ বিনিময় হার যতই বাড়ানো হোক তাতে কোনো লাভ নেই। যারা হুন্ডি করে, তারা রেট বাড়ালেও হুন্ডি করবে। তাদের কাছে রেট কোনো বিষয় নয়।

দেশের ডলার সংকটের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেকেই রপ্তানি মূল্য দেশে আনছেন না। বরং বিদেশি ক্রেতাদের পণ্যমূল্য পরিষদের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে দেশ থেকে আমদানি মূল্য পরিশোধ বাবদ ডলার চলে গেলেও রপ্তানির বিপরীতে তুলনামূলক ডলার কম আসছে। ফলে ক্যাশ ফ্লো কম হচ্ছে। ডেফার্ড পেমেন্ট নিরুৎসাহিত করতে বলা হয়েছে। আর এক্সপোর্ট পেমেন্ট আরও দ্রুত করতে বলা হয়েছে।  

মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। কিন্তু দেশে এসেছে ৪৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এখানে ৯ বিলিয়ন ডলারের একটি ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

মেজবাউল হক বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া পলিসিগুলো ব্যাংকারদের অবহিত করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এখন মূল লক্ষ্য। এটা করতে গিয়ে কলমানি রেট বেড়ে গেছে, আমানত, ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বেড়েছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসির অংশ। এর ফলে মানি সাপ্লাই কমে যাবে।

হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার কমাতে কোনো পদক্ষেপ সম্প্রতি নেয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেগুলার মনিটরিং হচ্ছে। রপ্তানি আয় প্রত্যাবসন ও আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নজরদারি করা হচ্ছে। যেখানে সন্দেহ হচ্ছে সেখানে তদারকি জোরদার করা হচ্ছে। রেমিট্যান্সের কোন অ্যাকাউন্টে কত টাকা আসছে সেটাও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে এবং সংস্থাটির ঋণের শর্তাবলি কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছে। দেশের কয়েকটি ব্যাংকের এমডিদের সঙ্গেও আইএমএফ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে আইএমএফের সঙ্গে ব্যাংকের এমডিদের কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে তারা গভর্নরকে অবহিত করেন। এছাড়া গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে মরক্কো গিয়েছিলেন এবং সে বিষয়ে ধারণা দিতেই গতকালকের বৈঠক হয়েছে বলে জানা যায়।