Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:35 pm

ডলারের বাজারে যেন অস্থিরতা তৈরি না হয়

সম্প্রতি আইএমএফের শর্ত অনুসারে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এক দিনেই এক ডলারের বিপরীতে টাকা মান হারিয়েছে সাত টাকা। এতে টাকার বাজার বেশ চাপে পড়েছে। এই দাম বৃদ্ধির নানা প্রভাব রয়েছে অর্থনীতিতে। ডলারের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু লোক নানা ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করবে। আবার একশ্রেণির ব্যবসায়ী নানা সুবিধা লুফে নেয়ার সুযোগ পাবে। এতে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। তাই ডলারের বাজারে যাতে কোনো ধরনের অস্থিরতা দেখা না দেয়, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সজাগ থাকতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগেই বলেছিল, তারা ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান সমন্বয় করবে। এই ক্রলিং পেগ হচ্ছে ধীরে ধীরে মুদ্রার মান বাড়ানো বা কমানো। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে টাকার মান অবমূল্যায়ন করেছে, সেটিকে ক্রলিং পেগ বলা যায় কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা সংস্থাটি মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বাড়িয়েছে সাত টাকা। এক লাফে এত বেশি হারে ডলারের দাম বাড়ালে বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়া স্বাভাবিক বৈকি।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এক দিনে ডলারের দর বৃদ্ধি ৭ টাকা: ঝুঁকির মুখে অর্থনীতির সব খাত!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ডলারের দর আনুষ্ঠানিকভাবে এক লাফে সাত টাকায় বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে বাড়তি খরচ বহন করতে হবে। এতে সরকারের বাজেটে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন (১০ হাজার ৬৪ কোটি) ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১১০ টাকা ধরে) ছিল ১১ লাখ ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা। তবে গত বুধবার ডলারপ্রতি দর সাত টাকা বেড়ে যাওয়ায় ঋণের পরিমাণ দেশীয় মুদ্রায় এক লাফে বেড়েছে ৭০ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। কারণ বুধবার থেকে ডলারের বিনিময় হার ১১৭ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসেবে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। এ ধরনের বহুমাত্রিক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

এর বাইরে খোলাবাজারে ডলারের দাম নিয়ে চরম মাত্রায় অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এরই মধ্যে খোলাবাজারে ১২৫ টাকায় ডলার বিক্রি হওয়া শুরু হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর বেশি দামেও ডলার বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। দাম বৃদ্ধির কারণে হয়তো কিছু ডলার কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ফিরে যাবে, কিন্তু ডলারের একটি বড় অংশই কালোবাজারির মতো ব্যবসার কবলে পড়তে পারে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সজাগ ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে বলেই বিশ্বাস।