Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 2:51 am

ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ডলারের বিপরীতে রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে ভারতীয় মুদ্রা রুপির। দরপতনের নতুন রেকর্ড করেছে রুপি। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে এক ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৭৭ দশমিক ৮১-তে পৌঁছে। খবর: রয়টার্স।

এর কিছুক্ষণ পর রুপির মানের খানিকটা উন্নতি হয়। ভারতের মুদ্রাবাজারে এখন এক ডলারের বিপরীতে রুপির মান ৭৭ দশমিক ৭৯। এর আগে ভারতের ইতিহাসে ডলারের বিপরীতে রুপির সর্বনি¤œ মান পৌঁছেছিল ৭৭ দশমিক ৭৫-এ। চলতি বছর ১৭ মে এই রেকর্ড ছুঁয়েছিল দেশটি।

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গতকাল ভারতের মুদ্রাবাজারে মুদ্রাটি রীতিমতো দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ফরেন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যাবসায়ের সঙ্গে যুক্ত একটি ভারতীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আপাতত শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনাবেচা করছে। বাজারের অস্থিরতা রোধ করতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে এর মাধ্যমে সাময়িকভাবে বাজার শান্ত থাকলেও শেষ রক্ষা হবে না। ভবিষ্যতেও রুপির মান আরও কমবে।

ভারতের মুদ্রাবাজার-বিষয়ক একাধিক বিশ্লেষকের মতে, কভিড-১৯ মহামারির কারণে দীর্ঘ অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এটি কমবেশি প্রত্যাশিত ছিল যে, চলতি অর্থবছর ২০২১-২২ সাল থেকে ডলারের বিপরীতে রুপির দরপতন শুরু হবে।

আগামী অর্থবছর ২০২২-২৩ সালের শেষ নাগাদ এক ডলারের বিনিময়ে মিলবে ৭৯ রুপি। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় প্রত্যাশিত সময়ের আগে ভারতের মুদ্রাবাজারে ডলারের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত ১৩ সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে অপরিশোধিত তেলের দাম। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা জানান, চীনের বিভিন্ন প্রদেশে লকডাউন থাকার কারণে এখন এই মূল্যবৃদ্ধি বাড়ছে। দেশটি লকডাউন শিথিল করলে হু-হু করে বাড়তে পারে অপরিশোধিত তেলের দাম।

ভারত তার প্রয়োজনের ৮৫ শতাংশ জ্বালানি তেল আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করে। অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ায় দেশটিতে প্রায় সব পণ্য ও পরিষেবার মূল্য বেড়েছে। ফলে দিন দিন দেশটিতে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতির হার। সম্প্রতি পতন হয়েছে ভারতের শেয়ারবাজারেও। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির শেয়ারবাজারে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম পড়ে যায়। জাতীয় অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগে রয়েছেন। নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধানে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা থেকে মূলধন সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জ্বালানি সরবরাহে ঝুঁকি এবং বিশ্বজুড়ে সুদের উচ্চ হারে মন্দাভাব আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে গত ৯ মে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৭৭ দশমিক ৪০ রুপি রেকর্ড করা হয়। গত মার্চে রুপির রেকর্ড দরপতন হয়। ডলারের বিপরীতে রুপির মান সর্বনি¤œ ৭৭ দশমিক ০৫-এ নেমে আসে। ২০২০ সালের ১৩ মার্চ ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির রেকর্ড দরপতন হয়। সেদিন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৭৪ দশমিক ৫০ রুপিতে ওঠে, শতাংশের হিসাবে যা শূন্য দশমিক ৪-এর কম। এটি ছিল তখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির সর্বনি¤œ দর। মহামারির কারণে রুপির মুদ্রামানের এই অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। চীন থেকে ছড়ানো ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে নয়াদিল্লি সব ধরনের ভিসা দেয়ার কার্যক্রম সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করে। এদিকে সেদিন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ভারত থেকে ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (২৭০ কোটি ডলার) মূলধন তুলে নেন।

তবে কভিড মহামারির আগে ২০১৯ সালেও অবমূল্যায়ন হয় রুপির। তখন বিশেষজ্ঞরা বলেন, রুপির দামের অবনমনের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির

গতি শ্লথ থেকে শ্লথতর হয়ে পড়া। আরও আগে ২০১৩ সালের ৬ আগস্ট ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির রেকর্ড দরপতন হয়। সেদিন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ৬১ দশমিক ৮০ রুপিতে ওঠে। তখন পর্যন্ত এটি ছিল ডলারের বিপরীতে রুপির সর্বনিন্ম দর।