নিজস্ব প্রতিবেদক: সংকটের কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিপরীতে ৯২ টাকায় বিক্রি করেছে ডলার। এতে গত চার দিনে তিন টাকা কমল টাকার মান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯২ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে, যেটা সোমবার ছিল ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯২ টাকা রেটে ১৩০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। সোমবার ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা ধরে ১৩০ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল।
এ হিসেবে এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯২ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি
করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এক দিন আগেও এক ডলা?র বিক্রি করেছে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। তার আগে ৫ জুন ছিল ৯১ টাকা ৫০ পয়সা, ৪ জুন ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা। তারও আগে গত ৩১ মে ছিল ৮৯ টাকা।
বিভিন্ন ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ব্যাংকগুলো আমদানি বিলের জন্য নিচ্ছে ৯৪ থেকে ৯৫ টাকা, নগদ ডলার বিক্রি করছে ৯৬ থেকে ৯৭ টাকায়, আর ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হয় ৯৭ থেকে ৯৮ টাকায়।
গতকাল গুলশান আইডিয়াল মানি এক্সচেঞ্জের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল জানান, তারা মঙ্গলবার ডলার বিক্রি করছেন ৯৭ টাকা ৩০ পয়সায়, আর কিনেছেন ৯৬ টাকা ৮০ পয়সায়। অন্যদিকে মার্স মানি এক্সচেঞ্জ হাউজ বিক্রি করছে ৯৭ টাকা ২০ পয়সায়, তারা কিনছে ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায়।
এর আগে দেশে বেশি বেশি রেমিট্যান্স আনতে গত বৃহস্পতিবার ডলারের দামের সীমা তুলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়, বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকগুলো নিজেরাই ডলারের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। এর পর থেকে চার দফায় মার্কিন এ মুদ্রাটির দাম বাড়ানো হলো তিন টাকা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। এ বছরের ৯ জানুয়ারিতে এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এ?প্রিল আ?রও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরও ২৫ পয়সা। ১৬ মে বাড়ে ৮০ পয়সা। ২৩ মে বাড়?লো ৪০ পয়সা। ফলে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সায়। এর পর গত ৩১ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর পর ৪ জুন ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা, ৫ জুন হয় ৯১ টাকা ৫০ পয়সা এবং ৬ জুন দাঁড়ায় ৯১ টাকা ৯৫ পয়সায়। সবশেষ গতকাল ডলারের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৯২ টাকায়।