ডলার জটিলতায় কয়লা আমদানি বন্ধ, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

রফিক মজিদ, শেরপুর: ডলার জটিলতায় প্রায় দুই কোটি টাকার ভারতীয় কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর দিয়ে। বিষয়টি আন্তঃদেশীয় বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহার চেষ্টা করা হলেও কার্যত কোনো লাভ হয়নি। এতে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি আমদানিকারকরা।

জানা যায়, নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারকরা সম্প্রতি কভিডের প্রকোপে এমনিতেই ব্যবসায় পিছিয়ে রয়েছেন। তার ওপর গত ২০১৮-১৯ সালে কয়লার ওপর প্রায় ২৫ জন ব্যবসায়ী ২৫টি এলসি করেন। তৎকালের ৭৩ টাকা রেটের ডলারে ওই এলসি ভারতের মেঘালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে কয়লা আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে লোকসানে পড়ে বাংলাদেশের কয়লা আমদানিকারকরা।

নাকুগাঁও বন্দরের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা জানায়, সম্প্রতি ভারতে কয়লা আমদানিতে আগের সমস্যার সমাধান হওয়ায় ভারতের মেঘালয় থেকে ২০১৮-১৯ সালের এসসিকৃত কয়লা আমদানি শুরু হয়েছে। কিন্তু সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের বরাত দিয়ে জানায়, আগের ডলারের মূল্যে করা এলসির কয়লা দিতে পারছে না তারা।

জানা গেছে, বর্তমান ডলার মূল্য প্রায় ৮৬ টাকা থাকায় ভারতীয় কাস্টমস পূর্বের মূল্যের (৭৩ টাকা ডলার) মাল (কয়লা) ছাড় দিচ্ছে না স্থানীয় সরকার শুল্ক কম পাবে বলে। এ কারণে বর্তমানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পুরোনো কোনো এলসির কয়লা আনতে পারছে না।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জানায়, বর্তমানে ডলারের দরে বাড়তি টাকা পাঠলে স্থানীয় কাস্টমস সে কয়লা ছাড় দিবে। অন্যথায় আগের দরে কয়লা আমদানিতে ছাড় দেবে না। এতে ভারতীয় কাস্টমস বাড়তি শুল্ক পাবে। এমতাবস্থায় স্থানীয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ওই কয়লা আমদানি করতে না পেরে ব্যাপক লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

এ বিষয়ে নাকুগাঁও বন্দরের কয়লা ব্যবসায়ী রুস্তম আলী জানান, ২০১৮-১৯ সালে আমরা ৭৩ টাকা ডলারে এসসি করে সরকারকে যথারীতি টেক্স ও ভ্যাট পরিশোধ করেছি। কিন্তু বর্তমানে বন্দরে পণ্য আসা শুরু হলে তাদের পূর্বের ক্রয় করা কয়লা আনতে চাইলে ভারতীয় কাস্টমস ওই দরে মালছাড় না দেয়ায় আমাদের ২৫ ব্যবসায়ীর দুই কোটি টাকা কয়লা আটকা পড়ে আছে।

এদিকে নতুন ডলারে (৮৬ টাকা) দু-একজন ব্যবসায়ী কয়লা ক্রয় করে আনলেও ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য খরচসহ আট হাজার ৬০০ টাকা টনের কয়লার মূল্য পড়ে প্রায় ১৯ হাজার টাকা, যা প্রায় দ্বিগুণ। ফলে এত উচ্চ রেটে কয়লা বিক্রিও করা যাচ্ছে না এ বন্দর দিয়ে। তবে পুরোনো রেটের ওই মাল আনতে পারলে কিছুটা লাভ হতো এবং ব্যবসা আবারও চালু হতো। বিষয়টি আন্তঃদেশীয় বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহার জন্য আমাদের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি এবং শেরপুর চেম্বারকেও জানানো হয়েছে।

আখি-মুন্নি এন্টারপ্রাইজের পরিচালক খোরশেদ আলম জানায়, বর্তমান রেটে মাল আনলে লোকসান হবে। এছাড়া যদি আমরা এখন এসসি ভাঙাতেও যাই তাতেও লোকসান হবে। এখন আমরা তাহলে কী করব? ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কেন আমাদের পূর্বের রেটে ক্রয় করা মাল দেবে না? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগে দাবি জানাই যেন বিষয়টি সুরাহা করে দেন।

নাকুগাঁও স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল জানান, আমাদের কাস্টমস ও সমিতির মাধ্যমে ভারতের কাস্টমস ও সমিতির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সুরাহা করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০