ডলার বিক্রি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে গত সপ্তাহে ডলার বিক্রি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গত রোববার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, সারের মতো এলসি বাধাগ্রস্ত না করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকে আবারও ডলার বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল জরুরি পণ্য আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কাছে ৯৭ টাকা দরে ১০ কোটি ৯ লাখ ডলার বা ১০৯ মিলিয়ন বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে গতকাল দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলারে। যদিও নিট হিসেবে রিজার্ভ আরও কম। নিট হিসেবে বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ২৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার।

জানা যায়, গত ১ নভেম্বর ৬৩ মিলিয়ন, ২ নভেম্বর ১৭, ৩ নভেম্বর ৩১, ৭ নভেম্বর ১৩১, ৮ নভেম্বর ৬৮ এবং ৯ নভেম্বর ৬০ মিলিয়ন বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে চলতি অর্থবছরের গতকাল পর্যন্ত ৫৪৭ কোটি ৬ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়। আর গত অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে বিক্রি করে ৭৬২ কোটি ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে এত ডলার বিক্রি করা হয়নি। অথচ তার আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ায় দর ধরে রাখতে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় এলসির দেনা পরিশোধ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে পর্যায়ে নেমেছে তাতে ঢালাওভাবে ডলার বিক্রি করলে ঝুঁকিতে পড়তে হবে। যে কারণে এখন আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমদানিতে তদারকি জোরদার, শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন নির্ধারণসহ বিভিন্ন উপায়ে এলসি কমানো হয়েছে। এরপরও জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রায় ১২ শতাংশ আমদানি বেড়ে এক হাজার ৯৩৪ কোটি ডলার খরচ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জুনে তা কমে ৪১ দশমিক ৯২ বিলিয়নে দাঁড়ায়। আর অক্টোবর শেষে আরও কমে ৩৫ দশমিক ৮০ বিলিয়ন নেমে যায়। আর আগস্ট-সেপ্টেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার পরিশোধ করার পর রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন।

বাংলাদেশ ব্যাংক যে দরে ডলার বিক্রি করছে, সে দরে করছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। গত বুধবার আন্তঃব্যাংক গড়ে ১০৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১০৫ টাকা ২৮ পয়সায় ডলার বেচাকেনা হয়। গত বছরের একই সময়ে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে ১৯ টাকা ৫০৩ পয়সা।

অবশ্য সাম্প্রতিককালে ডলারের সংকট নিরসন ও প্রবাসী আয় বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিজেরাই বসে ডলারের দাম নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) যৌথ সভায় এ দাম নির্ধারণ করে।

বাফেদার ঘোষিত দাম অনুযায়ী, এখন থেকে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১০৭ টাকা কিনতে পারবে ব্যাংক। বাণিজ্যিক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়ন হবে প্রতি ডলার ১০০ টাকা। এছাড়া রেমিট্যান্স আহরণ ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ব্যাংকগুলোর গড় (ওয়েট অ্যান্ড এভারেজ) মূল্যের সঙ্গে সর্বোচ্চ এক টাকা যোগ করে আমদানিকারকের কাছে ডলার বিক্রি করতে পারবে ব্যাংকগুলো। বৈদেশিক মুদ্রার সংকেট বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাফেদা ও এবিবি নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। হুন্ডির কবলে পড়ে প্রবাসী আয় ধারাবাহিকভাবে কমেছে। অক্টোবরে রেমিট্যান্স কমে ১৫৩ কোটি ডলারের নিচে নেমেছে, যা গত ৮ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। এই অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। গত সেপ্টেম্বরে তা কমে ১৫৪ কোটি ডলারে নামে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০