Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 2:30 am

ডলার সংকটে আটকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা খালাস

ইসমাইল আলী: ডলার সংকট ক্রমশ বাড়ছেই। এতে একদিকে এলসি (ঋণপত্র) নিষ্পত্তি বিলম্বিত (ডেফার্ড) হচ্ছে, অন্যদিকে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঋণ পরিশোধ আটকে যাচ্ছে। এর তালিকায় যুক্ত হয়েছে কয়লা খালাস নিয়ে জটিলতা। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গত মাসে চারটি জাহাজে কয়লা এলেও ডলার সংকটে ভাড়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এতে আটকে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কয়লা খালাস। ফলে জাহাজ বসিয়ে রেখে প্রতিদিন ডেমারেজ দিতে হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার ডলার।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাতা বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় সোনালী ব্যাংকে। এতে বলা হয়, বিসিপিসিএলের মালিকানাধীন পায়রা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্বিঘেœ পরিচালনা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে নিরবচ্ছিন্ন কয়লা সরবরাহের জন্য জাহাজ এমভি প্রভু মিহিকা, এমভি রু চেন শাং ও এমভি আমেরিকা গ্রিকা যথাক্রমে ৫৫ হাজার, ৫৫ হাজার ও ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পৌঁছেছে। আর এমভি অ্যান্ড্রোমিডা ৬০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরে আগমনের অপেক্ষায় রয়েছে।

জাহাজ চারটি কয়লা নিয়ে যথাক্রমে ১৪, ১৭, ১৮ ও ২১ ডিসেম্বর এসেছে। চুক্তি অনুযায়ী, কয়লা খালাসের আগে ৯০ শতাংশ জাহাজ ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ৪০ লাখ ৯৩ হাজার ৯০২ ডলার। এর মধ্যে এমভি প্রভু মিহিকার ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৭০ ডলার, এমভি রু চেন শাংয়ের ৯ লাখ ৮৪ হজাার ১৫ ডলার, এমভি আমেরিকা গ্রিকার ১০ লাখ ৪৮ হাজার ১৬২ ডলার ও এমভি অ্যান্ড্রোমিডার ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৬৫৫ ডলার দরকার। তবে ভাড়া পরিশোধ না করতে পারায় চারটি জাহাজের জন্য দৈনিক যথাক্রমে ১৪ হাজার ৯৯৯ ডলার, ১৪ হাজার ৯৭৮ ডলার, ১৪ হাজার ৭৬০ ডলার ও ১৪ হাজার ৯৫২ ডলার ডেমারেজ দিতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, জাহাজ চারটির ভাড়া অগ্রিম পরিশোধে সোনালী ব্যাংকের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল করপোরেট শাখায় ফ্রেইট ইনভয়েস দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এখনও ভাড়া পরিশোধ না করায় চুক্তি অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় বিপুল পরিমাণ ডেমারেজ দিতে হবে। পাশাপাশি বিল পরিশোধ করে দ্রুত মাল খালাস না করতে পারলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কয়লা ঘাটতি দেখা

 দিতে পারে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া কয়লার নিজস্ব রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তা দীর্ঘ সময় জাহাজে অলস অবস্থায় থাকলে স্বতঃপ্রণোদিত প্রজ্বলনের মাধ্যমে যেকোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কয়লা দ্রুত খালাস করা প্রয়োজন। এজন্য দ্রুত জাহাজ ভাড়া পরিশোধে অনুরোধ করা হয়।

জানতে চাইলে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় স্বার্থে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্বিঘেœ পরিচালনা করা দরকার। এজন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে নিরবচ্ছিন্ন কয়লা সরবরাহ নিশ্চিতে দ্রুত কয়লা খালাস করা প্রয়োজন। বিষয়টি নিয়ে সোনালী ব্যাংকের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল শাখায় কয়েকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা ডলার ব্যবস্থা করতে না পারায় সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। ব্যাংক জানিয়েছে, তারা ডলার সংগ্রহে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। দ্রুত বিষয়টি সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে ডলার সংকটে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লার বিলও পরিশোধ করতে পারছে না বিসিপিসিএল। গত মাসে বিদ্যুৎ বিভাগকে ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে এ-সংক্রান্ত পৃথক চিঠি দেয়া হয়। এতে প্রয়োজনীয় ডলার ছাড় করতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করতে বলা হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা আমদানিতে যথেষ্ট ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ছিল না বিসিপিসিএলের। এজন্য তাদের চীনের অংশীদার হিসেবে সিএমসি ৬ মাস বিলম্বে বিল পরিশোধের শর্তে কয়লা সরবরাহে আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল বিসিপিসিএল ও সিএমসির মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তিও সই হয়।

চুক্তির আওতায় সিএমসি ২৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহ করে, যার মূল্য ৪৭৭ দশমিক ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত বকেয়া দাঁড়িয়েছে ১১৬ দশমিক ১৪১ মিলিয়ন ডলার।

নতুন কয়লা আসায় ডিসেম্বর নাগাদ তা বেড়ে ১৫১ দশমিক ৫২৮ মিলিয়ন ডলার দাঁড়িয়েছে। এছাড়া জানুয়ারিতে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসির ৩৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এজন্য আগের বকেয়া ১১৬ দশমিক ১৪১ মিলিয়ন ডলার দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে সিএমসি নতুন করে কয়লা সরবরাহে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এতে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১১৬ দশমিক ১৪১ মিলিয়ন ডলার পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।