Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 9:07 pm

ডলার সংকটে ২০ বছরে সর্বনিম্ন পুরোনো জাহাজ আমদানি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: ডলার সংকটে ঋণপত্র (এলসি) খোলায় কড়াকড়ির কারণে দেশে পুরোনো জাহাজ আমদানি ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছে মাত্র ১৫২টি। এসব জাহাজ ভেঙে লোহার টুকরা পাওয়া যায় ৯ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। এর আগে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ১১৪টি জাহাজ আমদানি হয়েছিল। সেগুলো ভেঙে পাওয়া গিয়েছিল ৯ লাখ ৫০ হাজার টন লোহা। ওই বছরটি ছিল সবচেয়ে কম আমদানির বছর।

চট্টগ্রাম কাস্টমস ও জাহাজভাঙা শিল্পের ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়। আমদানি করে সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলবর্তী জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোয় ধাপে ধাপে কেটে বিক্রি করা হয়। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ১৫২টি পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছে। এসব জাহাজ থেকে লোহার টুকরো পাওয়া গেছে ৯ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪৭টি পুরোনো জাহাজ আমদানি হয়েছে, সেগুলোয় লোহার পরিমাণ ৯ লাখ ৭১ হাজার টন। তার আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হওয়া ২০০ জাহাজে লোহার পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩০ হাজার টন। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে লোহার পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

মূলত ডলার-সংকটের কারণে এলসি খোলায় যে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, তার ভয়াবহ প্রভাব পড়েছে জাহাজভাঙা শিল্পে। ফলে জাহাজভাঙার পর প্লেট, লোহার টুকরা, সরঞ্জাম প্রভৃতি লৌহ ও ইস্পাত কারখানায় কাঁচামাল সরবরাহ কমেছে। ফলে লোহ ও ইস্পাতশিল্পের ছোট কারখানাগুলো কাঁচামাল-সংকটে ভুগছে। অনেক পুরোনো কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

পরিসংখানে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হওয়া জাহাজে লোহার পরিমাণ ছিল ২৫ লাখ ৩৩ হাজার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৬১ হাজার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯ লাখ ৯১ হাজার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২২ লাখ ৫৯ হাজার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ লাখ ৮৬ হাজার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩০ লাখ ৬৪ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৬ লাখ ৫ হাজার, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২০ লাখ ৫৫ হাজার, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭ লাখ ৭১ হাজার, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৭ লাখ ৮০ হাজার, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১০ লাখ ৯২ হাজার, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২২ লাখ ১৭ হাজার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ১৬ লাখ ৬০ হাজার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৯ লাখ ৭২ হাজার, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১১ লাখ ১৯ হাজার, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১০ লাখ ৬১ হাজার এবং ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৯ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লোহার টুকরা পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ও পুরোনো জাহাজের আমদানিকারক কামাল উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো চাহিদা অনুসারে এলসি দিতে পারছে না। তাই গত অর্থবছরের দেশের ইতিহাসে কম স্ক্র্যাব পাওয়া গেছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে কম দামে পুরোনো জাহাজ কেনার অফার পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমরা সেই সুযোগ নিতে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে জাহাজ ভাঙার জন্য গ্রিনশিপ ইয়ার্ডে রূপান্তর ডেডলাইন রয়েছে। ফলে প্রতিটি ছোট আকারের গ্রিনশিপ ইয়ার্ড নির্মাণে ৩০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা, মাঝারি আকারের ইয়ার্ডের জন্য ৪০ কোটি থেকে ৭০ কোটি টাকা এবং বড় আকারের ইয়ার্ডের জন্য ৮০ কোটি থেকে ১১০ কোটি টাকা প্রয়োজন; যা ইয়ার্ড মালিকদের পক্ষে বৈশ্বিক নানা সমস্যা ও প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানের অভাবে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে গ্রিনশিপ ইয়ার্ডে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে দেশে আরও কম পুরোনো জাহাজ আমদানি হবে। ফলে এ খাতে আরও আমদানি কমবে।

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক সোনালী ব্যাংক পিএলসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, গত এক বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর আমদানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসি খোলা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিএসআরএম, আবুল খায়ের মতো বড় গ্রুপগুলোকে এলসি দিতে পারছি না। ফলে ভবিষ্যতে এসব গ্রাহক আমাদের সঙ্গে তেমন লেনদেন করবে বলে মনে হয় না।