ডাক বিভাগের ই-কমার্স সেবা সফল হোক

 

ডাক বিভাগের সুদিন ফুরিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। চিঠিপত্রের বদলে মোবাইল ফোন কিংবা ইমেইলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের প্রাধান্যই এর প্রধান কারণ, নাকি কুরিয়ার সার্ভিসের দ্রুতগতির সেবা ডাক বিভাগকে পেছনে ফেলেছে, তা অবশ্য বিতর্কের বিষয়। হয়তোবা দুটি মিলেই ডাকের এক সময়কার রমরমা অবস্থাকে ম্রিয়মাণ করেছে। ডাক বিভাগের সেবা ধীরগতির বলে অভিযোগ ছিল; কিন্তু এর প্রতি আস্থাও ছিল অনেক। এখনও অনেকে চিঠি বা ডকুমেন্ট প্রাপকের হাতে পৌঁছানোর জন্য কুরিয়ার সার্ভিসের বদলে ডাক বিভাগের ওপর ভরসা করেন। তবে এটা অনস্বীকার্য, যুগের প্রয়োজনে আপডেটেড হতে হয়। নইলে মানুষ বিকল্প খুঁজে নেয়। ডাক বিভাগের হয়েছে সে অবস্থা। শহরাঞ্চলের অনেকেই আছেন, যারা দীর্ঘদিন ডাক বিভাগের সার্ভিস ব্যবহার করেন না।

ডাকের সুদিন ফিরিয়ে আনা জরুরি। গত কয়েক বছরে অবশ্য বিভিন্ন ধরনের সেবার মাধ্যমে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। তাতে সফলতাও এসেছে অনেকটা। বিদেশে চিঠি বা ডকুমেন্ট পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রচলিত কুরিয়ার সার্ভিসগুলো যেখানে অনেক অর্থ নেয়, ডাক বিভাগ সে তুলনায় কম অর্থে তা তুলে দিচ্ছে প্রাপকের হাতে। এর বাইরেও অর্থ পাঠানোর সুবিধা কিংবা বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিম বাড়ানোর মাধ্যমে ডাক বিভাগকে শক্তিশালী করার চেষ্টা হচ্ছে। এসব উদ্যোগের নবতর সংযোজন ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পণ্য পরিবহনের জন্য ‘পোস্ট ই-কমার্স সার্ভিস’। এর মাধ্যমে বেসরকারি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ই-ক্যাবের সদস্যরা যারা মূলত অনলাইনে কেনাবেচা করেন, তাদের পণ্য ডাক বিভাগ গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দেবে। উদ্যোগটি যদিও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু সেবাটি সফল হবে বলে আমরা আশা করছি। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ই-ক্যাব ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ডাক বিভাগের কিছু দুর্নামও রয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে প্রায় সবাই পরিচিত বলে উল্লেখ করা বাহুল্য। আমরা আশা করবো, নতুন উদ্যোগটি যাতে প্রথম দিন থেকেই গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে পারে, ডাক বিভাগ সেদিকে মনোযোগী হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকার ১১টি সাব-পোস্ট অফিস থেকে পণ্য গ্রহণ ও ২১টি পোস্ট অফিস থেকে তা বিতরণ করা হবে। আমরা চাইবো, খুব তাড়াতাড়ি এ সেবা সারা দেশে চালু হোক। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমও অবিলম্বে সারা দেশের ৯ হাজার ৮৮৬টি পোস্ট অফিসে কার্যক্রম বিস্তারের কথা বলেছেন এবং এটি ডাক বিভাগের আয়ের প্রধান উৎস হবে বলে জানিয়েছেন। আমরা তার কথায় আস্থা রেখে বলতে চাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো গাফিলতি বা অবহেলা না থাকলে উদ্যোগটি ব্যর্থ হওয়ার কারণ নেই। বাংলাদেশে ডাক বিভাগের মতো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক আর কোনো বেসরকারি কোম্পানির নেই। ডাক বিভাগ সেবাটির প্রতি আন্তরিক হলে এর সুদিন ফিরিয়ে আনতে বেশিদিন লাগবে না; বরং এ সেবার মাধ্যমে মানুষ ডাকের অন্যান্য সেবার প্রতিও আকৃষ্ট হতে পারে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০