নজরুল ইসলাম: প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারমূলক ডাক বিভাগের ‘পোস্ট-ই সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি সেন্টার’ শীর্ষক প্রকল্পে ২৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্ক্যানার, ফটোপ্রিন্টার ও সার্ভার ক্রয়ে এ দুর্নীতি করা হয়েছে। কেনাকাটায় বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে পরস্পর যোগসাজশে এসব অর্থ লোপাট করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ক্রয়ের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে এই দুর্নীতির তথ্য পেয়েছে দুদক।
অভিযোগের সঙ্গে ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক শুধাংশু শেখর ভদ্র, পরিচালক (ইউপিইউএ) ও উপ-প্রকল্প পরিচালক ফয়জুল আজিম, সাবেক পোস্টমাস্টার জেনারেল ও প্রকল্প পরিচালক আলাউদ্দিন আহমেদ, ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল (ডিপিএমজি) ও সহকারী প্রকল্প পরিচালক মোস্তাক আহমেদ, টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) সাবেক প্রধান কর্মধ্যক্ষ (প্লান্ট ও কমার্শিয়াল) আব্দুস ছামাদ ও টেলিফোন শিল্প সংস্থার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুল ইসলামের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক।
তাদের মধ্যে বিসিএস (ডাক) ২২ ব্যাচের কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ (০২৭৮৩৫) গত নভেম্বর মাসে উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। আর ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সরবরাহ ও পরিদর্শন) ফয়জুল আজিম আগামী ১ জানুয়ারি অবসরে যাচ্ছেন। বিসিএস ৮২ ব্যাচের আলাউদ্দিন আহমেদ ২০১৪ সালে অবসরে গেছেন। আসাদুল ইসলামও বিসিএস ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। আব্দুস ছামাদও ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। ২০২০ সালে সুধাংশু শেখর ভদ্রকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এসএম তারিকের স্বাক্ষর করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সুধাংশু শেখর ভদ্র, মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব), ডাক অধিদপ্তর, ঢাকাকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮-এর বিধি ৩ মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে বিধি-১২-এর বিধান অনুসারে আগামী ১১-১১-২০২০ খ্রিষ্টাব্দ হতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাধ্যতামূলক ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি এসব কর্মকর্তা ও ফ্লোরা লিমিটেডের কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে অত্যন্ত নি¤œমানের ২৪ হাজার ৬১০টি ল্যাপটপ টেশিস ও ফ্লোরা লিমিটেডের মাধ্যমে ক্রয় করে সরকারের ২৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি করেছেন। তারা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অপরাধ করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে আলাউদ্দিন আহমেদের কাছে জানতে চাইলেÑতিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি তো ২০১৪ সালে অবসরে চলে গেছি। আমি বিধি মোতাবেকই সব কাজ করেছি।’
অভিযোগের বিষয়ে ফয়জুল আজিমের কাছে জানতে চাইলেÑতিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি তো কয়েক দিন পরই অবসরে চলে যাচ্ছি।’ তারপর তিনি কল কেটে দেন। বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে মোস্তাক আহমেদের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। এছাড়া আব্দুস ছামাদ ও আসাদুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ‘পোস্ট-ই সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি সেন্টার’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি এটি একনেকে অনুমোদিত হয়। মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৫৪০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ৩০ জুন। প্রতিটি পোস্ট-ই-সেন্টার একজন পুরুষ ও একজন নারী উদ্যোক্তার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এখানে কম্পিউটারের ওপর মৌলিক প্রশিক্ষণ, বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগণকে ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান, ই-কমার্সের সেবা প্রদান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতা প্রদান, বিমা পলিসি বিক্রি এবং প্রিমিয়াম আহরণ ও বিতরণ করা, ই-বিজনেস সম্প্রসারণ, টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান, কৃষি তথ্য সেবাসহ প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করা হয়। পোস্ট-ই-সেন্টারের গাইডলাইনের রেকর্ডপত্র অনুযায়ী এসব সেবার বিপরীতে পাওয়া ফি থেকে ৮০ শতাংশ টাকা পাবেন উদ্যোক্তা, ১০ শতাংশ সরকার ও বাকি ১০ শতাংশ পোস্টমাস্টার।