ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে সচেতনতা জরুরি

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ওপর ডায়াবেটিসের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে অন্যান্য অঙ্গের মতো দৃষ্টিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমনকি রোগী স্থায়ীভাবে অন্ধও হয়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিসজনিত চোখের সমস্যাগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি অন্যতম। এতে চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল অংশ হচ্ছে রেটিনা। এটি মূলত পর্দা। চোখের ভেতরে এর অবস্থান। খুবই পাতলা ও স্বচ্ছ। স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এতে রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রক্তনালি। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিসে ভুগলে এই রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অতিরিক্ত সুগারের কারণে রক্তক্ষরণ হয়ে স্বচ্ছ রেটিনা ঘোলাটে হয়ে যায়, যাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি।

দীর্ঘদিন (৫-১০ বছর বা তার বেশি সময়) ডায়াবেটিসে ভুগছেন, এমন রোগী। আগে এক চোখে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি হলে। গর্ভকালে ডায়াবেটিস হলে। দেহে চর্বির মাত্রা বেশি বা রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে। একই সঙ্গে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে। অন্যান্য রক্তরোগ, যেমন রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন এমন ডায়াবেটিক রোগী। যাদের কিডনির সমস্যা আছে। যারা ধূমপান করেন, তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।

শুরুর দিকে স্পষ্টভাবে লক্ষণ বোঝা যায় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন জটিলতা অনুভব করতে শুরু করেন। যেমন চোখে ঝাপসা দেখা। চোখের সামনে কালো কালো জালের মতো দেখা। দৃষ্টিসীমায় ভাসমান বা উড়ন্ত কিছু দেখা। হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা। চোখে ব্যথা ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া। অন্ধকারে বা অল্প আলোয় দেখতে না পাওয়া বা দেখতে অসুবিধা হওয়া। রক্তচাপ এবং রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ডায়াবেটিসের ওষুধ খান। নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাবেন। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ধূমপান পরিহার করুন। স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

চোখের দৃষ্টিতে কোনো রকম পরিবর্তন লক্ষ করলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন।

দৃষ্টিতে তেমন অসুবিধা না হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলেই চলবে। কিন্তু চোখ যদি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথিতে আক্রান্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি ঝুঁকিতে থাকে, তাহলে চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রধান তিনটি চিকিৎসা হলো লেজার চিকিৎসা, চোখে ইনজেকশনের মাধ্যমে ওষুধ প্রবেশ করানো এবং অপারেশনের মাধ্যমে রক্ত বা আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করা। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির বিভিন্ন মাত্রা আছে। সে অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্যবস্থা নেবেন।

ডা. আনসারুল হক

চিফ কনসালট্যান্ট, ভিট্রিও-রেটিনাল অ্যান্ড লেজার সার্ভিস

ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০