ডায়াবেটিস যখন অন্ধত্বের কারণ!

ধরুন, আপনি হঠাৎ করেই এক সকালে ঘুম থেকে জেগে চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলেন। কিংবা আপনার মনে হচ্ছে চোখের সামনে পোকার মতো কালো কালো কী যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে! এমনও হতে পারে সেই সকালে আপনি কোনো কিছুই আর দেখতে পারছেন না। আচমকা একটা আলোর ঝলকানির পর পুরো পৃথিবী অন্ধকার! ভাবছেনÑদূর, এ রকম হয় নাকি!

যেকোনো মুহূর্তেই এ রকম কিছু হতে পারে, যদি আপনার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে থাকে। ডায়াবেটিসকে এ কারণেই বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। শুধু চোখ নয়, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে হৃৎপিণ্ড, রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, মুখ, দাঁত, পা ইত্যাদি অঙ্গও মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে ডায়াবেটিসের কারণে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি চলে গেলে সেই অন্ধত্ব থেকে ফেরানোর আর কোনো উপায় থাকে না। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যেমন জরুরি, তেমনি ডায়াবেটিক রোগীদের উচিত ডায়াবেটিসের চিকিৎসার পাশাপাশি নিয়মিত চোখ দেখানো।

ডায়াবেটিসজনিত চোখের সমস্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় যখন চোখের রেটিনা আক্রান্ত হয়। ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রেটিনাতে যে সমস্যা হয়, তাকে বলা হয় ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। রেটিনা হলো চোখের ভেতরের একটি অতি সংবেদনশীল পর্দা, যা আমাদের দৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। পৃথিবীতে যেসব কারণে অন্ধত্ব হয়, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি তার অন্যতম কারণ। যার যত বেশি দিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে, তার রেটিনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি। প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগে চোখের রেটিনায় রক্তবাহী সরু ধমনিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে রক্তনালি ফুটো করে রক্ত বের হয়ে আসে। দৃষ্টিশক্তি কমে যায় তখনই। পরবর্তী পর্যায়ে ধমনিতে রক্ত চলাচলের সমস্যা আরও বাড়লে রেটিনার বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো অক্সিজেন পৌঁছায় না। সেই অক্সিজেনের অভাব পূরণ করতে গজিয়ে ওঠে নতুন সরু রক্তনালি। কিন্তু তারা এতই ক্ষুদ্র ও অপরিপক্ব থাকে যে অনেক চেষ্টা করেও রেটিনার নানা অংশে রক্ত পৌঁছাতে পারে না। ফলে নতুন এই দুর্বল নালিগুলো ফেটে গিয়ে চোখে রক্তক্ষরণ হয়। তখন চোখের সামনে পোকার মতো কালো দাগ দেখা দেয়। এরপর একসময় রেটিনা আলাদা হয়ে সরে যেতে পারে। তখন দৃষ্টিশক্তি একেবারেই চলে যায়। (বাকি অংশ আগামীকাল)

সাজিদুল হক

চিকিৎসক

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০