বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের প্রায় অর্ধেকই নারী। এই নারীদের প্রতি পাঁচজনে অন্তত দুজন প্রজননক্ষম। ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণের পূর্ব প্রস্তুতি না থাকলে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। গর্ভধারণের সময় বিভিন্ন হরমোন ও শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে রক্তের শর্করা হয়ে পড়ে অনিয়ন্ত্রিত। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে গর্ভকালীন বিভিন্ন জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে চোখ বা কিডনির জটিলতা বাড়তে পারে।
গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি, অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ভূমিষ্ঠ শিশুদের জন্মকালীন শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, রক্তে শর্করা কমে যাওয়া, খিঁচুনি, জন্ডিস, পলিসাইথেমিয়া, অধিক ওজন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন।
সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করলে চিকিৎসককে জানানো প্রয়োজন। নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা ও তিন মাসের গড় এইচবিএওয়ানসি পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ, এ সময় ইনসুলিনের মাত্রা বা ধরন পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে।
গর্ভকালীন পুষ্টি নিশ্চিত করতে বিশেষ ক্যালরি চার্ট অনুসরণ করুন। গর্ভাবস্থায় ক্যালরি চাহিদা বারবার পরিবর্তন হতে পারে।
খালি পেটে ও তিন বেলা প্রধান খাবারের পর বাসায় নিয়মিত গ্লুকোমিটারের সাহায্যে ডায়াবেটিসের মাত্রা পরিমাপ করুন ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলে নিয়মিতভাবে হাঁটুন অথবা বাসায় হালকা ব্যায়াম করতে হবে। গর্ভাবস্থায় একেবারে শুয়ে-বসে না থেকে বাসায় হালকা কাজ করতে হবে।
যথেষ্ট বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে পরিহার করা চাই। গর্ভধারণের পরিকল্পনার শুরু থেকে গর্ভকালীন ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ফলিক অ্যাসিড সেবন করতে হবে।
স্ত্রীরোগ ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন।
ডা. এ হাসনাত শাহীন
ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা