ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি ও করণীয়

দেশে প্রায় ১ কোটি ১৩ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাদের প্রায় ৭০ শতাংশের রক্তে শর্করা কাক্সিক্ষত মাত্রায় নেই। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এ রোগে কী কী সমস্যা হতে পারে, তা জানা উচিত।

কিডনি অকার্যকারিতা: কিডনি বৈকল্যের প্রধান কারণ ডায়াবেটিস। কিডনি কেমন কাজ করছে, তা বুঝতে ডায়াবেটিসের রোগীদের বছরে অন্তত একবার প্রস্রাবের অ্যালবুমিনের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত। অ্যালবুমিন ক্রিয়েটিনিন রেশিও সবচেয়ে কার্যকর পরীক্ষা। কিডনি ভালো রাখতে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জোর দিতে হবে।

হƒদরোগ: বলা হয়, ৭০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী কোনো না কোনো সময়ে হƒদরোগে আক্রান্ত হন। আরও শঙ্কার কথা হলো, ডায়াবেটিসের রোগীদের হƒদরোগের তেমন কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে।

অন্ধত্ব: বিশ্বে অন্ধত্বের অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। তাই ডায়াবেটিসের রোগীকে বছরে এক-দুইবার অবশ্যই চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। এই চোখ পরীক্ষা মানে চশমার পাওয়ার দেখা নয়। চোখের রেটিনায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে কি না, কিংবা চোখের অভ্যন্তরে প্রেসার বেড়ে গøুকোমা হচ্ছে কি না, সেটি বিবেচ্য।

স্নায়ুবৈকল্য: ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পায়ে জ্বালা, ব্যথা, কামড়ানো, সুচ ফোটার অনুভ‚তি হতে পারে। অনুভ‚তিশূন্য মনে হতে পারে। পরবর্তী সময়ে এ থেকে ঘা, আলসার, সংক্রমণ এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্ত গড়াতে পারে। তাই নিয়মিত যতেœর পাশাপাশি পায়ের ত্বকে যেকোনো ক্ষত, সংক্রমণ, ছত্রাক, রঙের পরিবর্তন বা ফোসকা পড়লে দ্রæত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ডায়াবেটিসের রোগীদের এসব ঝুঁকি ছাড়াও মস্তিষ্কে রক্তরক্ষণ, চোখে ছানি, প্রস্রাবে সংক্রমণ, ফোড়া ও সন্তান প্রসবে জটিলতা ইত্যাদির হার বেশি।

করণীয়: সবচেয়ে জরুরি রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ। তিন মাসের গড় শর্করা ৭-এর নিচে হওয়া উচিত। তিন বা ছয় মাস অন্তর এই গড়Ñএইচবিএওয়ানসি পরীক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত বাড়িতে খালি পেটে ও খাবার দুই ঘণ্টা পর শর্করা পরীক্ষা করা উচিত; রক্তচাপ ও রক্তে চর্বি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত এসিই ইনহিবিটর বা এআরবি ওষুধ ব্যবহƒত হয়; নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি ডায়াবেটিসসহ অন্যান্য জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট দ্রæত হাঁটতে হবে; স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস রপ্ত করতে হবে। কোনো বিশেষ ধরনের ডায়েট নয়; বরং সুষম বা ব্যালান্সড ক্যালরি রেস্ট্রিক্টেড ডায়েটই সবচেয়ে উপকারী; ধূমপান বর্জন করুন। ওজন কমান। ভুঁড়ি কমাতে সচেষ্ট হোন। সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করুন। মানসিক চাপ কমান ও রাতে পর্যাপ্ত ঘুমান; চিকিৎসকের পরামর্শে বছরে তিন-চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান।

ডা. তানজিনা হোসেন

সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম

গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০