ডায়াবেটিস রোগীর শুষ্ক ত্বক

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রায় ৭৯ শতাংশ কোনো না কোনো ত্বকের সমস্যায় ভোগেন। বারবার ত্বকে সংক্রমণ, ছত্রাক, চুলকানি ইত্যাদির সঙ্গে শুষ্ক ত্বকও ডায়াবেটিসের রোগীদের বড় সমস্যা।

ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে প্রস্রাব বেশি হয়, প্রস্রাবের সঙ্গে চিনি যাওয়ার কারণে অসমোটিক ডাইউরেসিস হয়। ফলে শরীর ও ত্বক পানিশূন্য হয়ে পড়ে। ত্বকের এই পানিশূন্যতা শুষ্কতা সৃষ্টি করে। এছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীদের পা বা নি¤œাঙ্গে চুলকানি ও শুষ্কতা বেশি হওয়ার কারণ পায়ে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া। রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ডায়াবেটিসজনিত স্নায়বিক সমস্যা বা নিউরোপ্যাথিও একটা বড় কারণ।

অটোনমিক নিউরোপ্যাথি ত্বকের ঘাম নিঃসরণ কমিয়ে দেয় বলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। যাদের পা খুব শুষ্ক, তাদের পা ফাটা থেকে শুরু করে চুলকানি, সংক্রমণ ইত্যাদি বেশি হয়। অনুভূতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে অনেক সময় তা সঠিক সময়ে বোঝাও যায় না। ডায়াবেটিস রোগীর তাই ত্বকের যতœ আর শুষ্কতা রোধে বিশেষ যতœশীল হতে হবে।

সতর্কতা: সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ। যত জটিলতা হয়, তা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণেই হয়ে থাকে। রক্তে তিন মাসের গড় শর্করা অবশ্যই ৭-এর নিচে রাখুন। সে জন্য নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ বা ইনসুলিন নিন।

গোসল করা বা পরিষ্কার হওয়ার সময় খুব গরম পানি ব্যবহার করবেন না। এটি ত্বককে আরও শুষ্ক করে। বিশেষ করে যাদের নিউরোপ্যাথি আছে, তারা গরম পানি ব্যবহারে সাবধান। অজান্তেই ত্বক পুড়ে যেতে পারে। হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করবেন। ত্বক শুকিয়ে নিতে দেরি করবেন না। অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার না করে ময়েশ্চারযুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন। লোশনের চেয়ে ক্রিম বা অয়েন্টমেন্টজাতীয় ময়েশ্চারাইজার ভালো। অলিভ অয়েল বা স্কিন কেয়ার তেলও ব্যবহার করতে পারেন। পায়ের ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিনযুক্ত ময়েশ্চারাইজার নিতে পারেন।

ত্বক শুষ্ক হলে চুলকায়। নখ দিয়ে চুলকাবেন না বা আঁচড়াবেন না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। প্রচুর পানি পান করুন। সেই সঙ্গে তাজা শাকসবজি, ফলমূলও খাবেন। যাতে ত্বক পানিশূন্য না হয়। ভিটামিন ও খনিজের অভাব শুষ্কতা আরও বাড়াবে। পায়ের যতেœ দরকার বিশেষ সতর্কতা। পা নিজে নিজে পরীক্ষা করবেন। কোনো রকম পরিবর্তন, যেমন লালচে বা কালচে রং, ফোড়া, র‌্যাশ ইত্যাদি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অধ্যাপক মো. আসিফুজ্জামান

বিভাগীয় প্রধান

চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০