বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে ৩৫ লাখের বেশি নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতি ২০ জন নারীর একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। নারীদের জন্য ডায়াবেটিস রোগটি ভিন্ন মাত্রা ধারণ করে। কারণ নারীদের প্রজননক্ষমতা, সন্তান ধারণ ও প্রসব, ব্রেস্ট ফিডিংসহ নানা শারীরবৃত্তীয় ঘটনার ওপর প্রভাব ফেলে ডায়াবেটিস। এ ছাড়া নারীরা প্রায়ই নিজেদের বিষয়ে উদাসীন থাকেন। নানা কারণে সুশৃঙ্খল জীবনাচরণ বা খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে পারেন না, ব্যায়াম বা হাঁটায়ও অভ্যস্ত হতে পারেন না তারা। এ কারণে নারীদের ডায়াবেটিসের জটিলতা বেশি।
ডায়াবেটিস ও প্রজনন: যেকোনো নারীর গর্ভধারণের আগে ‘গর্ভ-পূর্ববর্তী সেবা’ অত্যন্ত জরুরি। যেখানে সন্তান নিতে ইচ্ছুক একজন নারীর রক্তচাপ, ওজন, ডায়াবেটিস, রক্তশূন্যতা, রক্তের গ্রুপ প্রভৃতি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। গর্ভধারণের আগে থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকলে অবশ্যই রক্তের এইচবিএওয়ানসি নিয়ন্ত্রণে এনে, মুখে খাবার ওষুধ ইনসুলিনে পরিবর্তন করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবে সন্তান নেবেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের গর্ভকালে রেটিনোপ্যাথি বা কিডনি জটিলতার ঝুঁকিও আছে।
যাদের আগে ডায়াবেটিস ছিল না, তাদেরও গর্ভধারণের ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে রক্তের সুগার টেস্ট করা আবশ্যক। পুরো সময় তাদের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।
ডায়াবেটিস ও নারীর দৈনন্দিন জীবন: আমাদের দেশের নারীরা কিছু বিষয়ে উদাসীন। তারা সময়মতো খাবার খান না। ফলে ‘হাইপোগ্লাইসেমিয়া’ হয়ে যায়। সবার খাওয়া শেষ হওয়ার পর খাবার অভ্যাস আছে অনেকের। বাড়ির অন্যদের জন্য তারা অপেক্ষা করে থাকেন। আবার খাবারের পরিমাণ ঠিকমতো পরিমাপ করেন না। উদ্বৃত্ত খাবার নষ্ট হবে ভেবে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন। তারা বাড়ির সবার ওষুধপত্রের বিষয়ে সচেতন থাকেন, কিন্তু নিজের দিকে তাকানোর সময় থাকে না। সময়মতো ওষুধ খেতে বা ইনসুলিন নিতে ভুলে যান। ফুরিয়ে গেলে আনা হয় না। অনেক সময় ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসার শিকার হন। নিয়মিত চেকআপ বা মনিটরিংয়ে যেতেও তাদের অনীহা। পরিবারের সদস্যদের অসচেতনতা ও উদাসীনতা নারীদের সুচিকিৎসা ও নিয়ম মানার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই নারীকেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সুষম স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, নিয়ম ও সময়ানুবর্তিতা, নিয়মিত ব্যায়াম এবং নিয়মিত চেকআপ তাদেরও দরকার। পরিবারের সবার সহযোগিতা ও সহমর্মিতা ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
–হাসিনা আক্তার লিপি
বিভাগীয় প্রধান, খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল