ডা. রফিকুল ইসলাম

আধা লিটার পানিতে এক মুঠো চিনি বা গুড়, সঙ্গে তিন আঙুলের এক চিমটি লবণের মিশ্রণ ঘরে বসে ডায়রিয়াজনিত পানিশূন্যতা দূর করার উত্তম পন্থা। প্যাকেটজাত খাবার স্যালাইনও একইভাবে ডায়রিয়ায় পানিশূন্যতার ঝুঁকি কমায়। পদ্ধতিগুলো এখন আমাদের সবারই জানা। এই সাধারণ পদ্ধতিটিই বিশ্বব্যাপী ডায়রিয়ার কারণে প্রাণহানির সংখ্যা কমিয়েছে। বর্তমানে সব ওষুধের দোকানে অল্প দামে খাবার স্যালাইন পাওয়া যায়। এর আবিষ্কারক ডা. রফিকুল ইসলাম।

রফিকুল ইসলাম ১৯৩৬ সালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে ইংল্যান্ডের ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও হাইজিন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।

চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যয়ন শেষে রফিকুল ইসলাম আইসিডিডিআর,বিতে কর্মরত ছিলেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাজ করেন। আইসিডিডিআর,বিতে তিনি ওষুধ নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেও তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ওআরএস।

বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই খাওয়ার স্যালাইন আবিষ্কার। এর মাধ্যমে ডায়রিয়ার হাত থেকে লাখ লাখ শিশুর জীবন বাঁচান ডা. রফিকুল। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যানসেট খাবার স্যালাইনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

খাওয়ার স্যালাইন আবিষ্কারের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও। জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রিত বাংলাদেশিদের শরণার্থী শিবিরগুলোয় একবার কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। তখন এর একমাত্র চিকিৎসা ছিল শিরায় দেওয়া স্যালাইন। কিন্তু স্যালাইন সরবরাহ কম থাকায় শরণার্থীদের প্রাণ বাঁচাতে খাবার স্যালাইন ব্যবহার করা হয়। পরে ১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খাবার স্যালাইনকে স্বীকৃতি দেয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ডায়রিয়ার চিকিৎসায় স্যালাইনের ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এটি ঢাকা স্যালাইন নামেও পরিচিতি লাভ করে তখন। এছাড়া বাংলাদেশি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এই খাবার স্যালাইনকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখে।

খাবার স্যালাইনের আবিষ্কারক ডা. রফিকুল ইসলাম আর নেই। লাখো মানুষের প্রাণরক্ষাকারী খাবার স্যালাইন আবিষ্কার হয়েছিল যাদের অবদানে তাদের মধ্যে অন্যতম এই ডাক্তার গত ৬ মার্চ রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি হƒদরোগে আক্রান্ত হন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত রোগেও ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।

 

শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০