নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাজ্যভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) বিরুদ্ধে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়ি শুল্ককর পরিশোধ না করে গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ার পরও গাড়ি ফেরত নেওয়া হয়নি। শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করা এমন ১১টি বিলাসবহুল গাড়ি আটক করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
গতকাল সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র বা সিআরপি (সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইসড) থেকে এসব গাড়ি আটক করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম শেয়ার বিজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগে সাভারের সিআরপি থেকে ডিএফআইডির বিলাসবহুল ১১টি জাপানে তৈরি ২০০১ মডেলের ৩০০০ সিসির মিৎসুবিশি পাজেরো গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। বুধবার বিকালে শুল্ক গোয়েন্দার একটি দল অভিযান চালিয়ে গাড়িগুলো জব্দ করে। জব্দ করা গাড়ির আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। ডিএফআইডি’র নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ১৯টি গাড়ি দুবছর আগে সিআরপির গ্যারেজে রাখা হয়। এর মধ্যে দু’দফায় আটটি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হলেও অবশিষ্ট গাড়িগুলো শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাখা হয়।
সিআরপি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেক আগে ডিএফআইডি সিআরপির বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করেছিল। সে সুবাদে ২০১৬ সালের ২৭ জুন ছয় মাসের জন্য ডিএফআইডিতে গাড়িগুলো রেখে যায়। তারপর থেকে ডিএফআইডি দু’দফায় আটটি গাড়ি সরিয়ে নিলেও বাকিগুলো নেয়নি। সিআরপির হেড অব সাপোর্ট সার্ভিস শহিদুর রহমান গাড়িগুলো সরিয়ে নিতে বহুবার ডিএফআইডিকে মেইল দিলেও কোনো সাড়া দেয়নি বলে জানানো হয়েছে।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী মুহম্মদ জিয়াউদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, চর রিহ্যাবিলিটেশন নামে একটি প্রকল্পের জন্য ডিএফআইডি শুল্কমুক্ত সুবিধায় বেশ কিছু গাড়ি আমদানি করে। প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও সিআরপিতে দুবছর ধরে গাড়িগুলো ফেলে রাখা হয়। এনবিআরকে না জানিয়ে এবং শুল্ক পরিশোধ না করে ডিএফআইডি গোপনে আটটি গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা তাদের থেকে তথ্য চাইলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেনি। গাড়ির কোনো কাগজও দেখাতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে প্রতিটি সংস্থার মধ্যে একটি দালালচক্র রয়েছে। এ চক্র বিদেশি কোনো সংস্থা গাড়ি বিক্রি করতে চাইলে কিনে নেয়। শুল্কমুক্ত সুবিধার এসব গাড়ি পরে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে দেয়। ডিএফআইডি একই কাজ করেছে। আমরা আরও তদন্ত করে দেখছি।
উল্লেখ্য, কাস্টমস আইন অনুসারে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে কেউ কোনো গাড়ি ব্যবহার করলে পরবর্তীতে ওই কর্মকর্তার পদবি পরিবর্তন হলে বা অন্য কোনো সংস্থায় যোগদান করলে পুরাতন কাস্টমস পাসবুক জমা দিয়ে নতুন করে পাসবুক গ্রহণ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে পুরাতন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করা যাবে না। কাস্টমস আইন ১৯৬৯-এর ৭ ধারা অনুসারে প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা গাড়ির বিষয়ে এনবিআরকে জানাতে হয়। গাড়ি হাতবদল করলে শুল্ক-করাদি পরিশোধ করতে হয়।

Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:32 pm
ডিএফআইডির শুল্কমুক্ত সুবিধার গাড়ি গোপনে বিক্রি
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: