Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 4:45 am

ডিএসইতে সূচক বাড়ায় রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিনের মন্দা বাজারে সূচক ও লেনদেন ছিল পতন ধারায়। এতে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবারই পুঁজিবাজারে পতন থামে। তবে গতকাল অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ও ঘোষণার মধ্য দিয়ে গতি আসে পুঁজিবাজারে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক বেড়ে রেকর্ড গড়েছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সূচকের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যমতে, গতকাল ডিএসইতে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১৪৯ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৭৪৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রায় গত তিন বছরের মধ্যে এটি সূচকের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ মে ডিএসইএক্স বেড়েছিল ১৩০ পয়েন্ট। এদিকে গতকাল অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৪৮৫ পয়েন্ট বেড়ে ১৬ হাজার ৬৯৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিন বাজারে ক্রেতার চাপে বেশ কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতা উধাও হয়ে যায়। এছাড়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে।

সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে জমা রাখা হবে। এছাড়া  কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা রাখার (সিআরআর) এক শতাংশ কমিয়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশ করা হবে। আর শিগগিরই এ সিদ্ধান্ত সরকার কার্যকর করবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল রোববার সকালে গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে এমনটিই ঘোষণা দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্য দিয়ে পুঁজিবাজারে আরেকটা বিপর্যয়কে থামানো গেল। এতে সামনের দিনগুলো পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। সিআরআর কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে দাবি ছিল। সেই সঙ্গে ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাত রেশিও কমানোর পর ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ব্যাপকভাবে আলোচনায়। এতে তারল্য বাড়াতে উচ্চ সুদে আমানত নেওয়া শুরু করে ব্যাংকগুলো। এর ফলে ঋণে সুদের হার বাড়তে থাকে। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের তারল্যেও ঘাটতি শুরু হয়। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার মাধ্যমে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় পুঁজিবাজার।

এ সম্পর্কে মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) কার্যনির্বাহী সদস্য এবং এএফসি ক্যাপিটালের সিইও মাহবুব হোসেন মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, সরকার একটি চমৎকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে রাখা হলে তারল্য সংকট কেটে যাবে। এছাড়া সিআরআর এক শতাংশ কমানোর ফলেও পুঁজিবাজারে যে তারল্যের অভাব তা দূর হবে।

তিনি বলেন, তারল্য সংকট কেটে গেলে শেয়ারে বিনিয়োগ করে লাভবান বেশি হবে বিনিয়োগকারীরা। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুর থেকে পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। নতুন বছরে ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৭৫৬ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন কমেছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

নতুন বছরের লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, জানুয়ারির প্রথমদিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ছয় হাজার ৪৫৪ পয়েন্টে। ফেব্রুয়ারির প্রথম কার্যদিবসে সূচকের অবস্থান হয় ছয় হাজার ২১ পয়েন্ট। আর ১ মার্চ তা আরও কমে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৮৭০ পয়েন্টে। আর বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আগে সর্বশেষ অর্থাৎ ২৮ মার্চ সূচকের অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ৪৮৮ পয়েন্টে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের টানা দরপতনের কারণে পুঁজিবাজারে স্টেকহোল্ডারদের দুটি সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) এবং ডিএসই বোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সংবাদ সম্মেলন করে নানা দাবি জানায়। এর মধ্যে সংগঠন দুটি জানায়, ব্যাংকের ঋণ আমানত অনুপাতের রেশিও কমানোর বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বাজার স্থিতিশীলতার স্বার্থে তারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন। আর এসব বিষয় নিয়ে গত শুক্রবার ব্যাংক মালিক ও শীর্ষ ব্যবস্থাপকদের দুটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অর্থমন্ত্রী। আর এর পরপরই তিনি দুটি ঘোষণা দেন তিনি। যদিও বৈঠক সূত্রে শুক্রবারই জানা গেছে, সরকারি আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে রাখা হবে, যা এখন ২৫ শতাংশ রাখা হয়।