ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা

সাইমউল্লাহ সবুজ : দেশের পুঁজিবাজারে কয়েক বছর ধরে মন্দা চলছে। মন্দায় সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে এক লাখ আট হাজার ৭৬ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল সাত লাখ ৭০ হাজার ২৩২ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর শেষে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৬২ হাজার ১৫৫ কোটি টাকায়। এতে দেশের জিডিপির তুলনায় বাজার মূলধনের অনুপাত চার দশমিক ২৭ শতাংশ কমে ১৩ দশমিক ১২ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়া বাজারটিতে সূচক, লেনদেন, বিনিয়োগকারীর হিসাব সংখ্যাসহ অন্যান্য প্রায় সব নির্দেশক কমেছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সস্পৃক্ত। গত অর্থবছরে দেশের অর্থনীতিতে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। তাই পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি খারাপ হবে, এমনটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে দেশের অর্থনীতি ভালো হলে চলতি অর্থবছরে পুঁজিবাজার ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরতে পারে।
ডিএসইর তথ্যমতে, পুঁজিবাজারের পাঁচটি উপাদানের মধ্যে ইকুইটি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন কমেছে। অন্যদিকে বেড়েছে ট্রেজারি বন্ড ও করপোরেট বন্ডের, আর ডিভেঞ্চারের বাজার মূলধন অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজার মূলধনের অর্ধেকের বেশি দখলে ইকুইটির। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে পুঁজিবাজারে ইকুইটির বাজার মূলধন দাঁড়ায় মোট মোট বাজার মূলধনের ৫৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ, যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৫৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

এতে ইকুইটির বাজার মূলধন কমেছে তিন দশমিক ৯৮ শতাংশ। বাজার মূলধনের দিক থেকে পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ট্রেজারি বন্ডের বাজার মূলধন আগের অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তিন দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক ৫১ শতাংশে। এ সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন কমেছে দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। এতে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে মোট বাজার মূলধনের মাত্র দশমিক ৪৭ শতাংশে। করপোরেট বন্ড শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে মোট বাজার মূলধনের দশমিক ৬৪ শতাংশে। আর পুঁজিবাজারে ডিবেঞ্চার রয়েছে মোট বাজার মূলধনের শূন্য দশমিক শূন্য এক শতাংশ।

গত অর্থবছরেও পুঁজিবাজারে লেনদেনে খরা দেখা গেছে। অর্থবছরের ২৪১ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের সমপরিমাণ কার্যদিবসে ছিল এক লাখ ৯১ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪১ হাজার ২২২ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পুঁজিবাজারে গতি কমার পাশাপাশি বাজার থেকে সরকারেরও কর আদায় কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ডিএসই থেকে কর সংগ্রহ করেছিল ২৪৩
কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২৭৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ সরকারের কর রাজস্ব আদায় কমেছে ৩২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

গত অর্থবছরে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে এক হাজার ১৫ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট। এতে ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে সূচকটি দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৩২৮ দশমিক ৪০ পয়েন্টে। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ২৪৩ দশমিক ১৮ পয়েন্ট এবং ডিএসই শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৯ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে এক হাজার ৯০৯ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট এবং এক হাজার ১৮০ দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট নেমে আসে।

নিম্নগতির পুঁজিবাজারে আগ্রহ হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে অনেকে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন। পুঁজিবাজারে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনারস) হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএলের হিসাব অনুসারে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিও হিসাব কমেছে ৮৫ হাজার ৬২৮টি। ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে বিও হিসাবসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৬টিতে, যা আগের অর্থবছর শেষে ছিল ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৪টি। এর মধ্যে একক বিও হিসাবসংখ্যা ৩৫ হাজার ১৭টি কমে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৫টি এবং যৌথ বিও হিসাবসংখ্যা ৪৮ হাজার ৩৭৬টি কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ১৮১টিতে।

তথ্যমতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে মোট তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা ৬৬০টি। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৯টি নতুন সিকিউরিটিজ। নতুন তালিকাভুক্ত হওয়া সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি কোম্পানি, একটি মিউচুয়াল ফান্ড ও পাঁচটি করপোরেট বন্ড। অন্যদিকে দুটি ট্রেজারি বন্ড কমেছে। এ হিসাবে সিকিউরিটিজগুলোর মধ্যে কোম্পানি ৩৫৯টি, মিউচুয়াল ফান্ড ৩৭টি, ট্রেজারি বন্ড ২৪০টি, করপোরেট বন্ড ১৬টি ও ডিবেঞ্চার রয়েছে আটটি।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতি ভালো নেই। গত অর্থবছরে পুঁজিবাজার খারাপ হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ কমে যাওয়া, টাকার অবমূল্যায়ন, সুদের হার বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া। এতে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন সূচক কমেছে। অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। দেশের অর্থনীতির ভালো হলে, পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে ভবিষ্যতে বাজার ইতিবাচকও হতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০