নিয়াজ মাহমুদ: প্রতি বছর বিভিন্ন খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও পুঁজিবাজার থেকে কমেছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেকহোল্ডার কাছ থেকে গত পাঁচ বছরে সরকারের রাজস্ব আয় তো বাড়েইনি বরং কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। ২০১১-১২ অর্থবছরের তুলনায় সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কমেছে প্রায় ৫৮ শতাংশ।
পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেন কমে যাওয়ায় সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার পরিমাণ কমেছে। ২০১০ সালে পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের পর থেকে লেনদেন কমতে থাকে। সে বছর যেখানে ডিএসইতে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, সেখানে ২০১৬ সালে লেনদেন নেমে আসে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকায়। লেনদেনের ওপর ধার্যকৃত উৎসে কর থেকেই রাজস্ব আয়ের বেশিরভাগ আসে। তাই লেনদেন কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়ে। আর ট্রেকহোল্ডারদের কাছ থেকে কর সংগ্রহও কমেছে।
ডিএসইর সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডারদের থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে ১০৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর আগের অর্থবছরে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডাররা মোট রাজস্ব দেয় ১১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তারা রাজস্ব দেয় ১১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ট্রেকহোল্ডারদের থেকে সরকার রাজস্ব বাবদ আয় করে মাত্র ৮৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে ১৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক পরিচালক শেয়ার বিজকে বলেন, টানা দরপতন ও লেনদেন কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় কমেছে। একই কারণে কমেছে ব্রোকারেজ হাউজের আয়ও। ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী তেমন আসেননি। আর বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ প্রান্তিক ঋণের (মার্জিন লোন) জালে আটকে পড়ে লেনদেনের সক্ষমতা হারিয়েছে। এর ফলে লেনদেন আশঙ্কাজনক কমে গেছে।
ডিএসইর তথ্যমতে, বিদায়ী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিএসই থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ১৫৮ কোটি চার লাখ ৩০ হাজার ৩৯২ টাকা। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫ সালে সরকার রাজস্ব আয় করেছিল ১৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৭ টাকা। অর্থাৎ এক বছরে রাজস্ব আদায় কমেছে ১৬ কোটি ৮৫ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৫ টাকা বা প্রায় ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
দু’ধরনের রাজস্ব আয়ের মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডারদের কাছ থেকে সরকার ১০৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা আয় করেছে। আর উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের কাছ থেকে আদায় হয়েছে ৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সব মিলে ১৫৮ কোটি চার লাখ ৩০ হাজার ৩৯২ টাকা রাজস্ব আয় করেছে সরকার।
এর আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার বা সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের কাছ থেকে আদায় হয়েছিল ৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। সে বছর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল এক লাখ ১২ হাজার ৩৫১ কোটি ৯৪ লাখ ৫১ হাজার ১৮৬ টাকা। এ লেনদেন থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৭৪ কোটি ৮৯ লাখ ৭৫ হাজার ৩৮৭ টাকা।
আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪, ধারা ৫৩-এর আওতায় ডিএসই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রতি মাসে রাজস্ব প্রদান করে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডিএসই থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ২৩ কোটি ৬১ লাখ ২৪ হাজার ৩০১ টাকা। কিন্তু জানুয়ারিতে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৬০ কোটি ৭০ লাখ ৫৫ হাজার ৮৯৮ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে ডিএসই থেকে রাজস্ব আদায় ৩৭ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা বা ৬১ শতাংশ কমেছে।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারিতে ছুটি থাকায় ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৯ কার্যদিবস। পক্ষান্তরে জানুয়ারিতে লেনদেন হয় ২৩ কার্যদিবস। এছাড়া জানুয়ারিতে বাজারে চাঙ্গাভাবের কারণে সার্বিক লেনদেন ও সূচক সাড়ে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে লেনদেন ছিল মন্দা। ১৯ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে ১৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময় গড় লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অন্যদিকে জানুয়ারিতে ২৩ কার্যদিবসে ডিএসইতে সর্বমোট লেনদেন হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। এ সময় গড় লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে ডিএসইতে গড় লেনদেন কমেছে ৪৬৭ কোটি টাকা।
ফেব্রুয়ারিতে ডিএসইর ট্রেকহোল্ডারদের থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ৩৮ হাজার ৬০ টাকা। যা আগের মাসে ছিল ৩৪ কোটি ২৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৮৩ টাকা। সে হিসাবে ডিএসই থেকে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৭৮ হাজার বা ৪৩ দশমিক ৩১ শতাংশ রাজস্ব আয় কমেছে।
অন্যদিকে উদ্যোক্তা পরিচালক ও প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের কাছ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ডিএসইর রাজস্ব আদায় হয়েছে চার কোটি ২০ লাখ ৮৬ হাজার ২৪১ টাকা। যা আগের মাসে ছিল ২৬ কোটি ৪৭ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৫ টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব আদায় কমেছে ২২ কোটি ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৪ টাকা বা ৮৪ শতাংশ।
ডিএসই থেকে রাজস্ব আয় পাঁচ বছরে কমেছে ৫৮ শতাংশ

Add Comment