নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় সব ধরনের ব্যাটারি বা যন্ত্রচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেছেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানসহ যেসব অযান্ত্রিক যানবাহনে মোটর, ব্যাটারি বা ইঞ্জিন সংযোজন করে যান্ত্রিক বানানো হয়েছে। এখন থেকে সেসব যানবাহন ডিএসসিসি এলাকার সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের যানবাহন সড়কে পাওয়া গেলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গতকাল সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণে রিকশা, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি, টালিগাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি নিবন্ধন, নবায়ন বা মালিকানা পরিবর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র এ কথা বলেন।
ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঢাকা শহরকে অনেক কবি-সাহিত্যিক “সিটি অব রিকশা বা রিকশার নগরী” বলে চিত্রিত করেছেন। এটা আমাদের ঐতিহ্য। রিকশাসহ আমাদের যে ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো রয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে আমরা নিবন্ধন ও নবায়নের আওতায় আনছি। এর মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা আনাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
নিবন্ধিত অযান্ত্রিক যানবাহন ছাড়া আর কোনো অযান্ত্রিক যানবাহনকে ঢাকা শহরে চলাচল করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘এরই মাঝে ডিএসসিসি এলাকার সড়কগুলোয় যানবাহনের কার্যকারিতা নিরূপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কোন সড়কে ধীরগতির যানবাহন চলবে, কোন সড়কে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে, সেগুলো আমরা নির্ণয় করব। এই নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে ধীরগতির যানবাহনগুলো নিবন্ধনের পাশাপাশি নিয়মের আওতায়ও আসবে। এটা শুধু নিবন্ধন কার্যক্রমই নয়, এই কার্যক্রম নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত সচল ঢাকা গড়তে পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে তাদের সড়ক নির্ধারণ করে দেব এবং চালকদেরও আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনব। এর ফলে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে যাতায়াত ব্যবস্থার আওতায় আসবে।’
রিকশাসহ অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিবন্ধন প্রদান যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার বদলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘আমার নির্বাচনী ইশতেহারে সচল ঢাকা গড়ার যে রূপরেখা দিয়েছি, সে পরিকল্পনায় যেমন দ্রুতগতির যানবাহন থাকবে, তেমনি ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহনও থাকবে বলে উল্লেখ করেছি। এই ঢাকা শহরের দীর্ঘ তিন দশকেরও অধিক সময় রিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহনের কোনো নিবন্ধন প্রদান করা হয়নি। কিন্তু তাই বলে কি ঢাকায় রিকশা চলে না? বাস্তবতা হলো, ঢাকায় রিকশা চলে এবং সেগুলো সবই অবৈধভাবে চলে। আর নিবন্ধনের আওতায় আনা মানে অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা। আমরা এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা-ভ্যান তথা অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিবন্ধন প্রদান করব।’
অনুষ্ঠানে করপোরেশন এলাকায় সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস করপোরেশনের পক্ষে একটি ঘোড়ার গাড়ি ও একটি রিকশার আবেদনপত্র সংগ্রহ করেন।
ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হকের সঞ্চালনায় ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী এ সময় বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মো. বদরুল আমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) শরীফ আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, ডিএসসিসি সচিব আকরামুজ্জামান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তনের জন্য করপোরেশন এরই মধ্যে এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। আগ্রহী ব্যক্তিবর্গ/প্রতিষ্ঠান আজ (১৩ সেপ্টেম্বর) থেকে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নগর ভবনের ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগ এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর দপ্তর থেকে অফিস চলাকালে নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ১০০ টাকার (অফেরতযোগ্য) বিনিময়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। গৃহীত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে যোগ্য বিবেচিত হওয়া আবেদনগুলোর অনুকূলে নির্ধারিত ফি জমাদান সাপেক্ষে নিবন্ধন দেওয়া হবে। প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে আজ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মোটরচালিত/যন্ত্রচালিত/ইঞ্জিনচালিত/ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরনের যানবাহনের নিবন্ধন প্রদান করা হবে না এবং এই ধরনের সব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।