নিজস্ব প্রতিবেদক: উপ-মহাব্যবস্থাপক সাইদুল ইসলাম তাহেরের শাস্তি মওকুফের আবেদন বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনিয়মের দায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকে বদলি করে ঢাকায় বদলি করা হয় তাকে। পাশাপাশি দুটি ইনক্রিমেন্ট (বেতন বৃদ্ধি) বাতিলের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই শাস্তি মাফ করার আবেদন জানালে তা প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে বোর্ড। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪২০তম পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিচালক, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, বন্ধকী জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ ছিল সাইদুল ইসলাম তাহেরের বিরুদ্ধে। গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশে পরিচালিত বিশেষ পরিদর্শনে এর সতত্যা পাওয়া গেলে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। বদলি করে পাঠানো হয় ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে। পাশাপাশি দুটি ইনক্রিমেন্ট বাতিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাইদুল ইসলাম তাহের প্রভাব খাটিয়ে শাখার খেলাপি গ্রাহক জনতার ট্রেডার্স ও জনতা ব্রিকসের বন্ধকী সম্পত্তি কিনতে চায়। কিন্তু অন্যান্য গ্রাহকের তুলনায় মূল্য কম দেয়ায় মালিকপক্ষ তার কাছে সম্পত্তি বিক্রি করতে রাজি ছিল না। এ কারণে মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও অন্যান্য আগ্রহী গ্রাহকদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখান তাহের। ডিজিএম তাহেরের কারণেই জমির মালিক অন্য গ্রাহকের কাছে জমিটি বিক্রি করতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহেরের কাছে ওই জমি বিক্রি না করার কারণগুলোর মধ্যে কম দাম প্রস্তাব এবং অতিরিক্ত দুই বিঘা জমির দাবি ছিল অন্যতম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সাইদুল ইসলাম তাহেরের মেয়ে সাদিয়া তাস্নিম এবং স্ত্রী হাসিনা পারভীনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় তিন কোটি টাকার স্থিতি পেয়েছে পরিদর্শন দল। সাইদুল ইসলাম তাহের জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি ও আইএফআইসি ব্যাংকের রাজশাহী শাখা ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা যৌথভাবে জনতা ব্রিকস এবং জনতা ট্রেডার্সের বন্ধককৃত জমি মুনাফার আশায় ক্রয়ে আগ্রহী হন। আর সে কারণেই এত ঘটনা। কিন্তু আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা হয়ে কোনোভাবেই জমি কেনাবেচার ব্যবসা করা যায় না।
বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানত ও ঋণের সুদহার যৌক্তিকীকরণ এবং সিআইবি রিপোর্ট গোপন করার কারণে অগ্রণী ব্যাংকের এক গ্রাহকের জরিমানা মওকুফ, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার বৃদ্ধি, পদ্মা ব্যাংকের এসএলআর সংরক্ষণের হার পুনর্নির্ধারণ, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের জন্য ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।
বোর্ড সভা শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের ব্যাংক খাতের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন ব্যাংক খাতের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা হয়েছে। কোনো ব্যাংকই এখন ৯ শতাংশের বেশি সুদ আরোপ করতে পারে না। তাদের মতোই আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও ঋণের সুদের হার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে। তবে কত শতাংশের মধ্যে আনা হবে, তার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দেশে কার্যরত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সুদহার ১২ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি সুদে আমানত নিচ্ছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের ঋণের সুদও চড়া। গত ফেব্রুয়ারিতে গড়ে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ সুদে আমানত নিয়েছে তারা। ঋণ বিতরণ করেছে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ সুদে। গড় সুদহার এ রকম হলেও খারাপ অবস্থায় থাকা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সুদহার আরও অনেক বেশি। অথচ একই মাসে ব্যাংকগুলো গড়ে ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে আমানত এবং ৭ দশমিক ১০ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ব্যাংকের তুলনায় চড়া সুদের পরও আমানত পাচ্ছে না অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আমানত আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান গণহারে মোবাইল ফোনে এসএমএস দিচ্ছে।