মো. শামীম হোসাইন, চবি: বর্তমান ডিজিটাল যুগেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এনালগ ব্যাংকিং সেবা চলমান যার কারণে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দেশের সব স্কুল-কলেজ ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার অন্তর্ভুক্ত হলেও স্বায়ত্তশাসিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং সেবা এখনও এনালগের বেড়াজালের গণ্ডি অতিক্রম করতে সক্ষম হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭-২৮ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তি, ফরম পূরণ, সেশন ফি জমাসহ যাবতীয় কাজের জন্য রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের একটিমাত্র শাখা। এখানে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে টাকা জমা দিতে বিড়ম্বনার ও ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
ইতোমধ্যে অনেক বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। অন্য বিভাগগুলোও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করছে। ফলে শুরু হয়েছে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার কাজ।
সরেজমিনে পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি, বিদ্যুৎ না থাকায় বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনা। অনেকেই ব্যাংক রসিদ পূরণ করছেন। প্রতিটি বুথেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ সারি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বর্তমানে গ্রাম-মফস্বলেও ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা পৌঁছে গেছে। সেখানে দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এনালগ পদ্ধতি চরম দুর্ভোগের। ব্যাংকিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদনে অন্যান্য ব্যাংকের শাখা স্থাপনও জরুরি। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারে।
এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললে তারা ব্যাংকে টাকা জমাদান পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, মাত্র একটি বুথে টাকা জমা নেয়ার কারণে শত শত শিক্ষার্থীকে এভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আলমগীর হোসেন বলেন, একুশ শতকের বিশ্বায়নের এ যুগে এখনও এভাবে এনালগ পদ্ধতিতে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দেয়া সত্যিই দুঃখের। এতে শিক্ষার্থীদের সময় অপচয়ের পাশাপাশি অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিভাগের কোনো কাজ ব্যাংকে গিয়ে করার কথা বললেই শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা বিরক্তিভাব চলে আসে। ডিজিটাল বাংলাদেশে এটা শিক্ষার্থীদের ওপর একরকম জুলুম। আধুনিকতার এ বিশ্বে এনালগ পদ্ধতি পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকির হোসেন খন্দকার বলেন, প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি চবির শিক্ষা ব্যবস্থায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য যেখানে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে উন্নত নাগরিক তৈরি করা, সেখানে সনাতনী পদ্ধতিতে ব্যাংকে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ফি প্রদান করা সত্যিই হতাশার ও ব্যর্থতার। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি আইটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে কাজ চলছে। বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেকেই আগ্রহী হয়েছেন। আশা করি, অতি দ্রুত কাজটি হয়ে যাবে এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
এ ব্যাপারে চবির নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজ হচ্ছে। পরীক্ষার রেজাল্ট, ফিনান্সিয়াল বিষয়গুলো খুবই সেনসিটিভ এ জন্যই সিস্টেমটা শতভাগ নিরাপদ ও কার্যকর কিনা তা যাচাই বাচাই করে আমরা এটার উদ্বোধন করব। আমরা এটি চালু করার আগে তাই সময় নিচ্ছি। আশা করি সমস্যাটি আমরা দ্রুত সমাধান করতে সক্ষম হব।