Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 1:44 pm

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সংবিধান বিরোধী আইনে পরিণত করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে আইনটিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী ও সংবিধানবিরোধী আইনে পরিণত করা হয়েছে বলে মনে করছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সেই কারণে এই আইনের সব নিবর্তনমূলক ধারা বাতিল করাসহ পুরো আইনটিকে নতুন করে ঢেলে সাজানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই মনে করছে সংগঠনটি।
গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান পাস হওয়া আইনের সংস্কার দাবি করেন। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ৩০ সেপ্টেম্বর সরকারের মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বৈঠক ও মন্ত্রিপরিষদে সম্পাদকদের উদ্বেগের বিষয় উপস্থাপনের ঘোষণা ইতিবাচক পদক্ষেপ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ব্যাপক উৎকণ্ঠা ও সুস্পষ্ট পরামর্শ পাশ কাটিয়ে অস্বাভাবিক দ্রুততায় আইনটি সংসদে অনুমোদন দেওয়ার পর আলোচনার মাধ্যমে বিতর্ক নিরসনের ইঙ্গিত আমাদের আরও উদ্বিগ্ন করছে।
তিনি বলেন, আইনটিতে এত বেশিসংখ্যক নিবর্তনমূলক, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ধারা রয়েছে যে, কোনো প্রকার আংশিক পরিবর্তন উদ্ভূত নিরাপত্তাহীনতার অবসান ঘটাবে না। মতপ্রকাশ ও বাক-স্বাধীনতাবিরোধী ও আইনের জবাবদিহিতাহীন অপব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টিকারী সব ধারা বাতিল করে আইনটি নতুন করে ঢেলে সাজানো ছাড়া এ পর্যায়ে অন্য কোনো বিকল্প নেই।
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, আইনটির খসড়ার ওপর দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা তাদের উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে সুস্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। আমলে নেওয়ার অঙ্গীকার করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। এই বাস্তবতায় তড়িঘড়ি করে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা বা দাবি মানা হয়েছে এমন ধারণা সৃষ্টির প্রচেষ্টা করা হলে তা যেমন হতাশাব্যঞ্জক, তেমনি আত্মঘাতী হবে।
তিনি বলেন, সম্পাদক পরিষদ ও গণমাধ্যমের অন্যান্য প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্য অংশীজনদের উদ্বেগের যথাযথ নিরসন সম্ভব হবে কি-না তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আরও মনে রাখতে হবে, এই নিবর্তনমূলক আইনের বিভিন্ন ধারা এবং এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের যে বিস্তৃত সুযোগ আইনের প্রয়োগকারীর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে তার ফলে গণমাধ্যমের পাশাপাশি দেশের সব মানুষ নিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে রয়েছেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এমন বাস্তবতায় আমরা আশা করি, সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও জনগণের সাংবিধানিক অধিকার, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে আইনটির বিতর্কিত সব ধারা প্রত্যাহার করে নতুন করে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেবেন।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই একটি যুগোপযোগী আইনের প্রয়োজন আছে এবং কোনোভাবেই আমরা দেশে একটি কার্যকর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের বিরোধিতা করছি না। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তার নামে মানুষের বাক-স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার হরণের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়াসকে আত্মঘাতী ও অগণতান্ত্রিক বিবেচনা করছি এবং এর থেকে বিরত থাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।