নিজস্ব প্রতিবেদক: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করার পর অনেক ‘মিসইউজ’ ও ‘অ্যাবিউজ’ দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, যুক্তিসংগত সব সাজেশন সরকার শুনতে চায়। যারা মানুষের গান গাইবে, তাদের কথা সরকার শুনবে। সুশীল সমাজের বক্তব্য বন্ধ করার উদ্দেশ্য সরকারের নেই। আজকের অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের সুপারিশগুলো সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নেবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার আলোচনার দ্বার উš§ুক্ত রয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ইউএসএইডের প্রামোটিং অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড রাইটস প্রকল্পের আওতায় কাউন্টারপার্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর নট ফর প্রফিট ল (আইসিএনএল) আয়োজিত ‘শেপিং অব থার্ড সেক্টরস লজ অ্যান্ড
পলিসিস’ বিষয়ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আবার বসা হবে। সেখানে যে কেউ মতামত দিতে পারবেন। কেন এই আইন করতে আমরা বাধ্য হয়েছি, তার প্রেক্ষাপট সবাই জানেন। এটা ব্যাখ্যা করে বলার দরকার নেই। অনেকে বলেছেন, এ আইন করে কোনো উপকার হয়নি, আমার মনে হয় কিছু উপকার হয়েছে। আমি এমন কথা বলব না, আইনটির কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। সব আইনেরই কিছু পদ্ধতিগত সমস্যা থাকে। আবার কিছু বাস্তবায়নের সমস্যা থাকে। যখন বাস্তবায়নে সমস্যা হয়, তখন আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়। ঠিক সে কারণেই বলছি, এ আইন নিয়ে আমরা আবারও বসব।
তিনি বলেন, যদি বিধি পরিবর্তন করে সমস্যার সমাধান করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আমরা সেদিকে যাব। যদি তারপরেও আমরা দেখি যে, আইনটির সংশোধন করা প্রয়োজন আছে, সেটা করতেও আমরা পিছপা হবো না। কিন্তু সম্পূর্ণ আইনটিকে বাতিল করে দেয়া যুক্তিসংগত হবে না। সেজন্য আসুন, আমরা আইনটি নিয়ে আবার বসি এবং সেখানে আইনটির সমস্যাবলি চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করি। এ বৈঠক রমজানের আগে হতে পারে। নাগরিক সমাজের প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, আপনাদের যেমন সংবিধানের প্রতি আনুগত্য আছে, তেমনি আমাদেরও আনুগত্য আছে। আমরাও চাই না সংবিধানবিরোধী কোনো আইন হোক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, কারও বাকস্বাধীনতা বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য এটা তৈরি করা হয়নি। পেনাল কোডে ফিজিক্যালি চুরি করলে কী শাস্তি হয়, সেটা রয়েছে। প্রযুক্তির বিস্তারের ফলে চুরি আর শুধু ফিজিক্যালি হয় না, ডিজিটাল মাধ্যমেও হয়। ডিজিটাল মাধ্যমে যে অপরাধগুলো হচ্ছিল তা প্রতিরোধের জন্য একটি আইনের প্রয়োজন ছিল। বিশ্বের যেখানেই এ আইনের বিষয়ে কথা হয়েছে, সেখানে কেউ বলেনি এ আইনের প্রয়োজনীয়তা নেই।
আনিসুল হক বলেন, আইনটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে এলে অংশীজনদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছিল। এরপর সংসদে স্থায়ী কমিটির সভায় এটকো ও সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছিল। সেখানে অংশীজনদের কিছু সাজেশন বা পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছিল। দুঃখের হলেও সত্য, এ আইন করার পর আমরা অনেক মিসইউজ ও অ্যাবিউজ দেখেছি।
তিনি বলেন, যখন এ আইনের যথেষ্ট অপব্যবহার হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আমি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসেছিলাম এবং জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভার্চুয়ালি বৈঠকে বসেছিলাম। এ বৈঠকে আমরা প্রথমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সেটা হচ্ছে আইনটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক। এরপর আমি জেনেভায় গিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পৃথিবীতে এরকম কোনো আইন আছে কি না, যদি থেকে থাকে তাহলে তার বেস্ট প্র্যাকটিসগুলো কী কী? সেটা জানা এবং সেটাকে এ আইনের সঙ্গে যুক্ত করে দুর্বলতাগুলো দূর করার চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বেসরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম যাতে সঠিক ও সাবলীলভাবে চলতে পারে, সেজন্য বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬-এর বিধিমালা দ্রুত প্রণয়নের বিষয়ে তিনি এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সঙ্গে কথা বলবেন।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, অধ্যাপক সি আর আবরার ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শেপিং অব থার্ড সেক্টরস লজ অ্যান্ড পলিসিস অনুষ্ঠানের ধারণাপত্র পাঠ করেন আইসিএনএলের কনসালটেন্ট শারমিন খান। এরপর প্যানেল আলোচকরা নাগরিক সমাজের ওপর বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর প্রভাব নিয়ে আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, বিশিষ্ট সমাজকর্মী খুশী কবিরসহ দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, উন্নয়নকর্মী, সাংবাদিকসহ নানা স্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।