নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: মিথ্যা ঘোষণার পণ্য খালাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে জালিয়াতির দায়ে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ মালিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ২৯ অক্টোবর বন্দর থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী শুল্ক কর্মকর্তা সুজয় দেবনাথ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার সিয়াম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. জলিল এবং সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি চট্টগ্রামের খান এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মাওলা খান বাবুলকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২২(২) ও ২৩(২) এবং দণ্ডবিধির ৪২০, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার চকবাজারের ৬৬ মৌলভীবাজার ঠিকানার মেসার্স সিয়াম এন্টারপ্রাইজের নামে গত ১০ জানুয়ারির ইনভয়েসে ১৩ হাজার ৫২০ কেজি চীনাবাদাম ও চার হাজার ৫১০ কেজি অলিভ ঘোষণায় একটি চালান আসে বন্দরে। চালানটি খালাসের জন্য চট্টগ্রাম শেখ মুজিব সড়কের প্রগ্রেসিভ টাওয়ারের খান এন্টারপ্রাইজ সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। গোপন সংবাদ থাকায় কাস্টম হাউসের অডিট, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা আমদানিকারকের বিল অব এন্ট্রি লক করে। পরে চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় ২১ হাজার ৬০ কেজি ঘোষণাবহির্ভূত নেসলে লেকটোগ্রো ফরমুলেটেড মিল্ক পাউডার ফর চিলড্রেন পাওয়া যায়, যা আমদানি নীতি আদেশ ২০১৫-১৮-এর অনুচ্ছেদ ১৭ অনুযায়ী শর্তযুক্ত পণ্য।
এর ফলে কাস্টম হাউসের কমিশনার আমদানিকারকের ওপর ৬৬ লাখ টাকা ব্যক্তিগত জরিমানা ও ১০ লাখ টাকা বিমোচন জরিমানা আরোপ করেন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের সিপি দাখিল সাপেক্ষে চালানটি খালাসের আদেশ দেন। এরপর গত ১১ অক্টোবর আমদানিকারক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সিপি দাখিল করেন। ১৩ অক্টোবর সিপি-বিষয়ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরেকটি চিঠি দাখিল করেন। দুটি চিঠির মর্মার্থ অনুযায়ী বিএসটিআই’র ছাড়পত্র এবং কমিশনারের বিচারাদেশ অনুযায়ী শুল্ককর ও জরিমানা দেওয়া সাপেক্ষে চালানটি খালাসের সিপি দেওয়া হয়েছে। চালানটি খালাসে দাখিল করা সিপি এবং অন্যান্য দলিলাদি যাচাইকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি এর হেডিংয়ে যে ওয়েবসাইটের ঠিকানা (িি.িসরহপড়সমড়া.পড়স) রয়েছে, তাতে দাখিল করা সিপি’র কপিও পাওয়া গেছে। তদুপরি শুল্কায়ন গ্রুপের কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সিপিতে স্বাক্ষরকারী উপসচিবের সঙ্গে সরাসরি ফোনালাপে জানা যায় দাখিল করা সিপি ভুয়া। এ বিষয়ে গত ২৬ অক্টোবর শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রকৃতপক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানিকারক বরাবর জারি করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ঘোষণাবহির্ভূত আমদানিকৃত পণ্যটি শিশুখাদ্য ও বিএসটিআই’র আওতায় শর্তযুক্তভাবে আমদানিযোগ্য হওয়ায় বিদ্যমান আমদানি নীতি আদেশের চতুর্থ অধ্যায়ের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদের বিধানসমূহ প্রতিপালিত হয়নি বিধায় সিয়াম এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে সিপি ইস্যু করার কোনো সুযোগ নেই মর্মে নির্দেশক্রমে অবহিত করা হলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট হচ্ছে িি.িসরহপড়স.মড়া.নফ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার নূর-এ হাসনা সানজিদা অনসূয়া বলেন, আমদানিকারক প্রথমত মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি করে দ্য কাস্টমস অ্যাক্ট, ১৯৬৯-এর ধারা ৩২ এবং দ্য ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট (কনট্রোল) অ্যাক্ট, ১৯৫০-এর সেকশন ৩(১) লঙ্ঘন করেছেন। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিপি জালিয়াতি ও ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে তাতে ভুয়া সিপি আপলোড করে কাস্টমস বিভাগকে বিভ্রান্ত ও প্রতারিত করার মাধ্যমে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।